মাছের কাঁটা

এ অভিজ্ঞতা মাছ খাওয়া মানুষ মাত্রেরই জীবনে কখনো না কখনো হয়েছে এবং গলার কাঁটা বার করা নিয়ে নানা কান্ডকারখানা আমরা সবাই কিছু না কিছু করেছি।

❓ প্রশ্ন : গলায় কাঁটা কেন আটকায়?

✅ উত্তর : গলার ভিতরের যে দেওয়াল তার আবরণ খুবই নরম। এই দেওয়ালের উপরের দিকে নির্দিষ্ট জায়গায় যেমন টনসিল থাকে তেমনি তার নিচের দিকেও ‘এপিগ্লটিস’ নামের পাতার মতো ঢাকনা শ্বাসনালীর উপরে ছাতার মতো চেহারায় বসে থাকে । এছাড়াও জিভের গোড়ায় এবং গলার বাকি গোটা দেওয়াল জুড়ে অজস্র ছোট ছোট লসিকা গ্রন্থিও কমবেশি অসমান ভাবে ফুলে থাকে। ইনফেকশন জনিত ঠান্ডা সর্দি, এলার্জি বা অ্যাসিড রিফলাক্স বেশি হলে উপরে বলা অংশগুলি বহু সময় বেশি ফুলে যায় ও খাবার চলাচলের পথকে ছোট করে দেয়। শুধু তাই নয়, প্রদাহের (inflammation) ফলে এই ফোলা দেওয়াল স্পঞ্জের মতো আরও নরম হয়ে যায় বলে এখান দিয়ে যাবার সময় কাঁটা সহজেই বিঁধে যেতে পারে।
টিভি বা মোবাইল দেখতে দেখতে অথবা গল্প করতে করতে অথবা তাড়াহুড়ো করে অন্যমনস্কভাবে খাবার সময় যেহেতু মুখের ভিতরের অনুভূতির দিকে তত খেয়াল থাকে না, তাই সেক্ষেত্রেও কাঁটা ফোটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

❓ প্রশ্ন : মাছের ধরণের উপরে কি কাঁটা বিঁধে যাওয়া নির্ভর করে?

✅ উত্তর : নিশ্চয়ই করে। কিছু মাছের কাঁটা বড় হলেও খুব নরম (যেমন পাবদা), আবার কিছু মাছ ছোট হলেও কাঁটা ভীষণ শক্ত ও ধারালো ( যেমন ট্যাংরা, কই, পুঁটি ইত্যাদি)। ফলে প্রথম ক্ষেত্রে কাঁটা কোনো সমস্যা না করলেও পরের ক্ষেত্রে সতর্ক না হলে অবধারিত ভাবে গন্ডগোল বাঁধাবেই। একইসাথে মাছের দেহের এক এক অংশের কাঁটার চেহারা এক এক রকম হয় । যে কাঁটার ডগা ইংরেজি Y অক্ষরের মতো, গলায় তার ফুটে যাবার প্রবণতা বেশি (যেমন কাটা পোনার পেটির একদম নিচের দিক ও লেজের কাঁটা)।

❓ প্রশ্ন : মাছের কাঁটা গলায় ফুটলে কী করবেন না?

✅ উত্তর :
১) বিন্দুমাত্র আতঙ্কিত হবেন না। গলায় কাঁটা বিঁধে গেলে প্রবল অস্বস্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক। যে কটা কাঁটা সারাজীবনে আপনার গলায় বিঁধতে পারে তার থেকে সহস্রাধিক কাঁটা নিজের অজান্তেই আপনি গিলে ফেলেছেন এতদিনে। এরা পেটে কোথাও বেঁধে থাকেনি, আপনার ক্ষতি করেনি। তাই গলায় বিঁধে যাওয়া কাঁটা আপনার কষ্ট সাময়িক বাড়ালেও অন্য কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
২) কাঁটা ফুটে খচখচানিতে বমি হয়ে যেতে পারে। এতে সময় সময় কাঁটা বেরিয়ে যায় কিন্তু নিজে গলায় আঙ্গুল পুরে বমির চেষ্টা করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কাঁটা আরও গভীরে ঢুকতে পারে।
৩) অনেকে কলা, শুকনো ভাত বা রুটি ইত্যাদি খেয়ে কাঁটা নামানোর চেষ্টা করেন। এতে কখনো কখনো হালকা ভাবে বিঁধে থাকা কাঁটা উঠে এসে পেটে চলে যায়। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। এর বেশি কোনো অত্যাচার গলার উপরে না করাই ভালো।
৪) কোনো ওষুধ খেয়ে কাঁটা গলানোর চেষ্টা করবেন না। অ্যাসিড জাতীয় দ্রব্য হয়তো কাঁটাকে নরম করে দিতে পারে কিন্তু একবার যুক্তি দিয়ে ভেবে দেখুন, যে ‘পদার্থ’ খেয়ে আপনি কাঁটা গলাতে নেমেছেন সে অত শক্ত একটা কাঁটাকে বেছে বেছে গলিয়ে দিল আর আপনার মুখের ভিতরের পাতলা দেওয়াল, রক্ত চলাচলের সূক্ষ্ম শিরা উপশিরা অথবা নরম মাংস ও গ্ল্যান্ড – এদের উপরে কোনো কাজ করল না, একি সম্ভব? তাহলে মোদ্দা কথা হল, ওষুধ খেয়ে কাঁটা গলে না।
৫) কাঁটা ফোটার বেশ কিছু দিন পরেও মাথায় ভূতুড়ে চিন্তা থেকে থেকে ফেরত নিয়ে আসবেন না। কাঁটার হাত পা নেই। সে গলার এই দেওয়াল ঐ দেওয়ালে নড়েচড়ে দিনের পর দিন বেড়াতে পারে না। দিন তিথি মেনে সে হঠাৎ হঠাৎ মাথা চাড়া দিয়ে ঠেলে উঠতেও পারে না। ঝাড়িয়ে সাপের বিষ বা মাছের কাঁটা – এসব নামানোর পিছনে সময় নষ্ট করা মানে অজ্ঞানতার হাত ধরে ক্ষতিকে ডেকে আনা।
৬) খরচ সাপেক্ষ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও কাঁটা আছে বা নেই – একথা বলা সিংহভাগ ক্ষেতে সম্ভব নয় । এ কারণে ওসব পরীক্ষার পিছনে ছোটা সাধারণভাবে নিষ্প্রয়োজন।

❓ প্রশ্ন : গলায় কাঁটা ফুটলে কী করব?

✅ উত্তর :
১) একটু ধৈর্য রাখুন। ডাক্তারি পরামর্শের বাইরে হলেও যে খাবারের সাথে খেতে খেতে মাছের কাঁটা ফুটেছে সেই ভাত, রুটি ইত্যাদি অথবা জল কয়েকবার গিলে দেখতে পারেন। একইভাবে কয়েকবার সামান্য জোরে গলা খ্যাকারী বা কাশি দিয়ে কাঁটা বেরোয় কিনা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। কিন্তু আগেও বলেছি, ঐ পর্যন্তই। এর বেশি নয়।
২) সমস্যা না মিটলে আপনার কাছের নাক কান গলার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন। সময় সময় তাঁর পক্ষে কাঁটা ফুটে থাকলেও দেখতে পাওয়া নাও যেতে পারে। এটা হয় রোগীর গলায় বমির মতো রিফ্লেক্স (gag reflex) বেশি থাকলে, কাঁটা গলার বেশি নিচে আটকে গেলে এবং অবশ্যই ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তাদের ভয়জনিত কারণে ভালো করে দেখার সুযোগ না দেবার জন্য। কিছু ক্ষেত্রে নিঃসংশয় হবার জন্য গলার ভিতরে এনডোস্কোপ দিয়ে দেখা হয়। এই পরীক্ষা রোগীকে বসিয়ে করা হয় এবং একটুও কষ্ট হয় না এতে।
যাই হোক না কেন, কাঁটা গলায় ফুটে থাকলে এভাবেই বোঝা যায় এবং কাঁটা বের করে দেওয়া হয়।
৩) যে যে কারণের জন্য গলায় কাঁটা ফুটতে পারে, তাদেরকে নিরাময় করুন। কাঁটার ভয়ে মাছের মতো এত সুস্বাদু ও উপাদেয় খাবার থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার কোনো যুক্তি নেই।

(নাক কান গলার চিকিৎসক হিসেবে সাধারণ মানুষের সতর্কতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য নিয়ে এই লেখা। মতামত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। আপনার কাছের চিকিৎসকের উপরে আস্থা রাখুন।)

+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

drsajalsur

কবিতা

ঝন্টুকাকার হঠাৎ করে খেয়াল এল টাকের তলায়,গ্লাসের জলের উপরটুকু উনি …

তুমি বলেছিলে, শ্রাবণের ঝিরিঝিরি সারাদিন বৃষ্টিতে মাটির উনুনে ধোঁয়ার গন্ধ …

তোর বাড়ির লাল দেওয়ালের পাশে,পোড়া ইঁটের রঙ লাল হয় তুই …

ছোটগল্প

বিনসা রোজ বেরোয় বেশ ভোরে। ঋষপের মোনাস্ট্রির ঠিক উল্টো দিকে …

একপেট ভাত খেয়ে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে জানালা দিয়ে ভেসে …

আমি গ্রামের দিকে যাই সপ্তাহান্তে। সেখানে গাছপালা খুবই বেশি। তাল, …

error: Content is protected !!
Scroll to Top