প্রশ্ন : নাক থেকে কেন জল পড়ে?
উত্তর : আমরা এখানে কিন্তু নাক থেকে শুধুমাত্র ‘পরিষ্কার জল পড়া’ নিয়ে আলোচনা করছি। সর্দি বা মিউকাস মিশ্রিত জল নিয়ে আলোচনা করছি না।
একদম জলের মতো তরল নাক থেকে যে যে কারণে আসতে পারে তাদের মধ্যে উল্লেখ করার মতো হল,
১) নাকের এলার্জি (এলার্জিক রাইনাইটিস্)- দুদিকের নাক থেকে জল পড়ে। সাথে সাধারণ ভাবে নাক চুলকানো, নাক বন্ধ ও হাঁচি ।
২) ভ্যাসোমোটর রাইনাইটিস্ – সাধারণভাবে হাঁচি থাকে না। বাইরের উত্তাপের তারতম্য, ধোঁয়া,চড়া গন্ধ বা মশলাদার খাবার থেকেও হতে পারে।
৩) মস্তিষ্কের জল বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড লিক – একদম স্বচ্ছ জল। সাদা কাগজ বা কাপড়ের উপরে পড়ার পরে শুকিয়ে গেলেও সেখানে কোনো দাগ থাকে না। সাধারণভাবে এক দিকের নাকেই আসে। মাথা নিচু করলে টপ টপ করে কলের ফোটার মতো জল পড়ে। নাক এবং মস্তিষ্কের মাঝের পাতলা হাড় চোট আঘাত লেগে , হঠাৎ প্রবল হাঁচি থেকে, টিউমার বা ইনফেকশন জনিত কারণে চাপ পড়ে বা ক্ষয়ে গিয়ে অথবা কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ফুটো (লিক) হয়ে গেলে এমন ঘটনা হতে পারে।
(কিছু ক্ষেত্রে একে মজা করে ‘হনিমুন রাইনাইটিস’ও বলে। শারীরিক মেলামেশার সময় হরমোনের প্রভাবেও এমন জল আসতে পারে নাকে।)
৪) জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ, কয়েকটা রক্তচাপ কমানোর ও মানসিক অবসাদের বড়ির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
৫) মরফিন জাতীয় নেশার ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করে দিলেও একই সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন : নাক থেকে জল আসলে কি করা উচিত নয়?
উত্তর :
১) নাক টানবেন না, ঝাড়বেন না। রুমাল বা কাপড়ে জোরে ঘষে ঘষে নাক মুছবেন না। এসব করতে গেলে নাকের উপশিরা বা ক্যাপিলারি ছিঁড়ে রক্ত আসতে পারে।
২) মাথায় বা নাকে চোট আঘাত, হঠাৎ একটা বিকট হাঁচির পর থেকে জল পড়া অথবা হাঁচি বা নাক বন্ধের মতো উপসর্গ নেই অথচ এক দিকের নাক দিয়েই স্বচ্ছ জল পড়ছে এমনটা যদি হয় তবে কোনোমতেই ঘরে বসে অপেক্ষা করা উচিত নয়। এটাকে ইমার্জেন্সি হিসাবে ধরে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই ধরণের ব্যাপার না হলে অবশ্য ব্যস্ত হবার মতো কিছু নেই।
৩) তিন চার সপ্তাহের বেশি একটানা নাক থেকে জল আসলে নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া বা টোটকা চিকিৎসা করা ঠিক নয়। কারণ খোঁজা প্রয়োজন।
প্রশ্ন : তাহলে কি করা উচিত?
উত্তর :
১) যদি মুছতেই হয় তবে পরিষ্কার কাপড় অথবা টিস্যু পেপার নিয়ে নাকের সামনে অথবা বাইরে জল আসলে খুবই হালকা করে শুষে নিন।
২) একদিকের নাক থেকে স্বচ্ছ জল পড়লে যতক্ষণ না অন্য কোনো ‘ডায়াগনসিস’ হচ্ছে ততক্ষণ তাকে মস্তিষ্কের জল ধরে নিয়েই চিকিৎসা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এমন হলে চিকিৎসক কিছু স্ক্যান বা নাকের এন্ডস্কোপি করাতে পারেন। মস্তিস্ক থেকে জল আসছে প্রমাণিত হলে কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে বিছানায় ৩-৪ সপ্তাহ বিশ্রাম নিলে ‘লিক’ নিরাময় হতে পারে । আর তেমনটা না হলে অপারেশন প্রয়োজন। তার কারণ, এমন জল পড়া বন্ধ না হলে নাকের জীবাণু মস্তিষ্কে ঢুকে মেনিনজাইটিস্ বা এনকেফেলাইটিস (মস্তিষ্কের ইনফেকশন) এর মতো সাংঘাতিক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
৩) এলার্জিক বা অন্য রাইনাইটিসের ক্ষেত্রে আন্টিহিস্টামিন (সেট্রিজীন জাতীয় ওষুধ), নাকের স্টেরয়েড বা অন্য স্প্রে, স্যালাইন নাকের ড্রপ বা স্প্রে বা ওয়াশ ইত্যাদি ব্যবহার করে সাময়িক নিরাময় হয়।
৪) ওষুধের বা নেশার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় হলে তা বন্ধ করা উচিত ।
(ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি ইনফেকশন জনিত কারণে নাকের জল মিউকাস বা পুঁজ মিশ্রিত হয় বলে ‘জলের মতো’ হয় না। এই আলোচনায় তাই এদেরকে ধরা হয়নি।
মতামত ব্যক্তিগত। সাধারণ মানুষের সচেতনতার উদ্দেশ্যে যথা সম্ভব ‘চিকিৎসা পরিভাষা’ বর্জন করে এই লেখা। সমস্যা হলে আপনার কাছের নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)