বিশ্বরূপের বাড়ি ছিলো বিশ্ববিণার পাশে,
হাঁটতে শেখার বয়স থেকেই এ ওর বাড়ি আসে।
বিশ্বরূপের বাবার ছিলো মস্ত জমিদারী,
ঝরখা খুলে চাইলে শুধুই কাড়তো নজর গাড়ি।
শান বাঁধানো উঠোন জুড়ে নতুন গাড়ির মেলা,
আজকে এটা কিনলে ওটা কাল বেচাটাই খেলা।
বিরাট বাড়ির অলিন্দতে টাকার ছিলো ঢেউ,
চাকর বাকর আরাম অঢেল , মন খোঁজেনি কেউ।
বিশ্ববিণার ছোট্ট বাড়ি গল্পে যেমন হয়,
তার বাবাও তো মস্ত বড় সেটাই ছিল ভয়!
অর্থ ঝুলি রইলো খালি সেসব কী শেষ কথা,
মানুষ হবার পথটা মনে শিক্ষা শেখায় যেথা।
প্রশ্ন অগাধ আলোর রূপে মোছে মনের কালি,
বিশ্বজগৎ সেথায় চোখে বোলায় জ্ঞানের তুলি।
ওদিকে সেই সাদা কালোর বোড়ের চালের দাবা,
শুধু জমিদারীর হিসেব বোঝেন বিশ্বরূপের বাবা।
এর পরেও তো গল্প থাকে জানতে কী আর মানা,
সেদিন আকাশ ভীষণ নীলে যখন ভেজায় ডানা;
নরম শিশির গোলাপ ফুলের পাপড়ি থাকে ছুঁয়ে,
সবাই তখন সে ফুল হাতেই বিদ্যাদেবীর পায়ে;
অঞ্জলি দেয় দুহাত জুড়ে আরাধনার তরে,
সদ্য যুবক একটি হৃদয় হাত রাখে হাত পরে;
কিশোরী এক সেদিনটাতেই মনের বেড়ি খুলে,
ভালোবাসার তরী ভাসায় প্রেমসাগরের জলে।
বিশ্বরূপের বাবা হলেন রাগেতে চণ্ডাল,
জমিদারের ছেলের কেন এমনতর হাল?
রাজার সাথে রাজার হবে আত্মীয়তার যোগ,
অর্থহীনের স্বভাব খারাপ অর্থ চোষাই রোগ।
দিনের আলোয় আঁধার ঢাকে বিশ্ববিণার বাড়ি,
বাবা ছুটি নিলেন আগেই তাদের সাথে আড়ি;
একলা মায়ের মাথার পাশে একলা মেয়ে রয়,
জীবন তরী ঘূর্ণি টানে ডুবছে, জেনে ভয়!
এখান থেকেই আমি না হয় গল্প বলি মিছে,
স্বপ্ন দেখুক নতুন জীবন দুঃখ থাকুক পিছে।
ফালি চাঁদের শেষ আলো যেই ডুবলো আকাশ পরে,
নিকষ কালো অন্ধকারে ছোট্ট বাড়ি ভরে;
সেই সময়েই হাতে নিয়ে একটু খানি আলো,
বিশ্ববিণার ভালোবাসা তার কাছেতেই এলো।
শিকল ছিঁড়ে হবু রাজা নতুন শিকড় পেতে,
না হয় জীবন নতুন আঁকুক, থাকুক দুজন সাথে।
আমি এবার আসি, এখন গল্প তোমার হাতে।
তোমরা জোড়ো দু চার কলি, নতুন হৃদয়েতে।