ডাক্তারী লেখা

নাক দিয়ে রক্তপাত

প্রশ্ন : নাক থেকে রক্ত পড়ার সমস্যা কেন বেশি? উত্তর : নাকের গঠন ও শারীরবৃত্তীয় কারণে রক্ত চলাচলের শিরা, উপশিরা বা ক্যাপিলারি সংখ্যায় অনেক বেশি। দেহের স্বাভাবিক ত্বক বা চামড়ার আবরণের সুরক্ষা নাকের ভিতরে থাকে না অথচ বাইরের হাওয়া, উত্তাপ, দূষণ বা আঘাত সহজেই নাকের উপরে সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাছাড়া নাকের হাড়ের উপরে যে আবরণ তাতে পেশী না থাকার কারণে সূক্ষ্ম উপশিরা বা ক্যাপিলারি ছিঁড়লে পেশী তন্তুর স্বাভাবিক সংকোচনে রক্ত তাড়াতাড়ি বন্ধ হবার উপায়ও থাকে না। এসবের জন্যই নাক থেকে রক্তপাতের সমস্যা বেশি হয়। প্রশ্ন : রক্তপাতের কারণ কি? উত্তর : এক এক বয়সে এক এক রকম কারণের প্রবণতা বেশি থাকে। ১) ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নাক খোঁটা, ক্রমাগত নাকের সর্দি বা কোনো কিছু নাকের মধ্যে ঢুকে ‘ফরেন বডি’ হয়ে ইনফেকশন বা প্রদাহ (inflammation) করা । ২) যৌবন বা তৎপরবর্তী সময়ে নাকের হাড় বেঁকে যাওয়া বা সাইনাস বা পলিপ বা ফাংগাস জনিত সমস্যা। ৩) বেশি বয়সের বেলায় বেড়ে যাওয়া রক্তচাপ ( high blood pressure) বা রক্ত তরল রাখার ওষুধ খাওয়া ( যেখানে অতিরিক্ত তরল হবার জন্য রক্ত জমতে সময় নেয় )। ৪) জিনগত কারণ বা লিভারের সমস্যা বা অন্য কিছু অসুখে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে যাওয়া। ৫) বয়সন্ধিতে ছেলেদের নাকের ধমনীর টিউমার অথবা বেশি বয়সে নাকের ভিতরে হওয়া কর্কট রোগ। ৬) এছাড়াও শীতকাল বা প্রবল গরমে নাকের ভিতরের আবরণ ফেটে বা যেকোনো বয়সে চোট আঘাত জনিত সমস্যা বা অন্যান্য কারণেও নাক থেকে রক্ত আসতে পারে। প্রশ্ন : নাক থেকে রক্ত আসলে কি করবেন না? উত্তর : ১) অযথা টেনশন করবেন না। শরীর কাটলে যদি রক্ত বেরোতে পারে তবে নাক থেকেও একই সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। নাক থেকে রক্তপাত থামতে সময় নেয় এটা অবশ্যই সমস্যা কিন্তু যত উত্তেজিত হয়ে পড়বেন, হার্টের গতি এবং রক্তচাপ তত বেড়ে গিয়ে আরও বেশি রক্ত ঝরাবে। ২) মাথার রক্ত নাক দিয়ে বেরোয় না। এর জন্য যে আঘাত প্রয়োজন তাতে অনেক আগেই মস্তিস্ক চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হবার কথা। তাই এ চিন্তা মাথায় আনার প্রয়োজন নেই। মস্তিষ্কের চারপাশে রক্ত থাকে না, জলের মতো স্বচ্ছ তরল থাকে। মস্তিস্ক ফুঁটো হয়ে নাকে কিছু যদি আসে তবে তা স্বচ্ছ জল, ‘লাল’ রক্ত নয়। ৩) নাকে জল টেনে বা নাক ঝেড়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা বিন্দুমাত্র করবেন না। এতে জমাট বাঁধা রক্ত (clot) নিজের নির্দিষ্ট জায়গায় জমে আরও রক্তক্ষরণ প্রতিরোধের যে স্বাভাবিক কাজ করছে সেটাকেই নষ্ট করে দেওয়া হবে। থেমে যাওয়া রক্তক্ষরণ নতুন করে আবার শুরু হবে। ৪) সামনে ঝুঁকবেন না। ভারি জিনিস তুলবেন না। কোষ্ঠ কাঠিন্য হতে দেবেন না। এসবে রক্তচাপ বেড়ে যায় ও পুনরায় রক্ত বেরোতে পারে। ৫) গরম বাষ্প নাকে টানবেন না। প্রশ্ন : তাহলে কি করণীয়? উত্তর : ১) যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। ২) বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী দিয়ে নাকের সামনের অংশ দুপাশ থেকে এমন ভাবে জোরসে চিপে ১০ মিনিট ধরুন যাতে ঐ চাপেই রক্ত বন্ধ হয় ( সব্জি কাটতে গিয়ে বঁটি বা ছুরিতে হাত কাটলে আপনি ঠিক যেমন চাপ দিয়ে রক্ত বন্ধ করেন)। ৩) বরফ নিয়ে নাকের উপরে ও চারপাশে লাগান যাতে ঠান্ডা পেয়ে রক্ত চলাচলের পথ সংকোচন হয়। ৪) চিৎ হয়ে শুয়ে থাকুন। নাকের ভিতরের রক্ত গলায় এসে পড়লে গিলে ফেলুন অথবা মুখ থেকে বের করে দিন। ৫) রক্তচাপ মাপুন। বেশি থাকলে এবং আপনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী হলে আপনার ঐ সংক্রান্ত প্রেসক্রিপশনের ওষুধ একটা অতিরিক্ত নিতে পারেন যদি চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা না যায়। ৬) হার্টের অসুখে রক্ত তরল রাখার ওষুধ খাবার জন্য থাকলে আপাতত তা বন্ধ রাখুন এবং আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। ৭) রক্তপাত বন্ধ করার কিছু ওষুধ ট্যাবলেট বা ইনজেকশন হিসাবে বাজারে পাওয়া যায় কিন্তু তা আদেও কাজ করবে কিনা অথবা খাওয়া যাবে কিনা সেটা আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করবেন। ৮) এভাবে রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে নাক কান গলার চিকিৎসককে রক্ত বেরোনোর আসল কারণ খোঁজার ও তা নিরাময়ের জন্য সুযোগ দিন। রক্তপাত বন্ধ না হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিকটবর্তী হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে নাকের ভিতরে ‘প্যাক’ করে অথবা ক্ষেত্র বিশেষে রক্ত বেরোনোর স্থান ‘ক্লিপ’ করে বা ‘পুড়িয়ে’ দিয়ে ( cauterization) রক্ত বেরোনো থামাতে হতে পারে। (মতামত ব্যক্তিগত। সাধারণ মানুষের সচেতনতার উদ্দেশ্যে যথা সম্ভব ‘চিকিৎসা পরিভাষা’ বর্জন করে এই লেখা। সমস্যা হলে আপনার কাছের নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)

0

নাক দিয়ে রক্তপাত Read More »

rhinitis, running water from nose

নাক দিয়ে জল পড়া

প্রশ্ন : নাক থেকে কেন জল পড়ে? উত্তর : আমরা এখানে কিন্তু নাক থেকে শুধুমাত্র ‘পরিষ্কার জল পড়া’ নিয়ে আলোচনা করছি। সর্দি বা মিউকাস মিশ্রিত জল নিয়ে আলোচনা করছি না। একদম জলের মতো তরল নাক থেকে যে যে কারণে আসতে পারে তাদের মধ্যে উল্লেখ করার মতো হল, ১) নাকের এলার্জি (এলার্জিক রাইনাইটিস্)- দুদিকের নাক থেকে জল পড়ে। সাথে সাধারণ ভাবে নাক চুলকানো, নাক বন্ধ ও হাঁচি । ২) ভ্যাসোমোটর রাইনাইটিস্ – সাধারণভাবে হাঁচি থাকে না। বাইরের উত্তাপের তারতম্য, ধোঁয়া,চড়া গন্ধ বা মশলাদার খাবার থেকেও হতে পারে। ৩) মস্তিষ্কের জল বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড লিক – একদম স্বচ্ছ জল। সাদা কাগজ বা কাপড়ের উপরে পড়ার পরে শুকিয়ে গেলেও সেখানে কোনো দাগ থাকে না। সাধারণভাবে এক দিকের নাকেই আসে। মাথা নিচু করলে টপ টপ করে কলের ফোটার মতো জল পড়ে। নাক এবং মস্তিষ্কের মাঝের পাতলা হাড় চোট আঘাত লেগে , হঠাৎ প্রবল হাঁচি থেকে, টিউমার বা ইনফেকশন জনিত কারণে চাপ পড়ে বা ক্ষয়ে গিয়ে অথবা কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ফুটো (লিক) হয়ে গেলে এমন ঘটনা হতে পারে। (কিছু ক্ষেত্রে একে মজা করে ‘হনিমুন রাইনাইটিস’ও বলে। শারীরিক মেলামেশার সময় হরমোনের প্রভাবেও এমন জল আসতে পারে নাকে।) ৪) জন্মনিয়ন্ত্রক ওষুধ, কয়েকটা রক্তচাপ কমানোর ও মানসিক অবসাদের বড়ির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ৫) মরফিন জাতীয় নেশার ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করে দিলেও একই সমস্যা হতে পারে। প্রশ্ন : নাক থেকে জল আসলে কি করা উচিত নয়? উত্তর : ১) নাক টানবেন না, ঝাড়বেন না। রুমাল বা কাপড়ে জোরে ঘষে ঘষে নাক মুছবেন না। এসব করতে গেলে নাকের উপশিরা বা ক্যাপিলারি ছিঁড়ে রক্ত আসতে পারে। ২) মাথায় বা নাকে চোট আঘাত, হঠাৎ একটা বিকট হাঁচির পর থেকে জল পড়া অথবা হাঁচি বা নাক বন্ধের মতো উপসর্গ নেই অথচ এক দিকের নাক দিয়েই স্বচ্ছ জল পড়ছে এমনটা যদি হয় তবে কোনোমতেই ঘরে বসে অপেক্ষা করা উচিত নয়। এটাকে ইমার্জেন্সি হিসাবে ধরে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই ধরণের ব্যাপার না হলে অবশ্য ব্যস্ত হবার মতো কিছু নেই। ৩) তিন চার সপ্তাহের বেশি একটানা নাক থেকে জল আসলে নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া বা টোটকা চিকিৎসা করা ঠিক নয়। কারণ খোঁজা প্রয়োজন। প্রশ্ন : তাহলে কি করা উচিত? উত্তর : ১) যদি মুছতেই হয় তবে পরিষ্কার কাপড় অথবা টিস্যু পেপার নিয়ে নাকের সামনে অথবা বাইরে জল আসলে খুবই হালকা করে শুষে নিন। ২) একদিকের নাক থেকে স্বচ্ছ জল পড়লে যতক্ষণ না অন্য কোনো ‘ডায়াগনসিস’ হচ্ছে ততক্ষণ তাকে মস্তিষ্কের জল ধরে নিয়েই চিকিৎসা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এমন হলে চিকিৎসক কিছু স্ক্যান বা নাকের এন্ডস্কোপি করাতে পারেন। মস্তিস্ক থেকে জল আসছে প্রমাণিত হলে কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে বিছানায় ৩-৪ সপ্তাহ বিশ্রাম নিলে ‘লিক’ নিরাময় হতে পারে । আর তেমনটা না হলে অপারেশন প্রয়োজন। তার কারণ, এমন জল পড়া বন্ধ না হলে নাকের জীবাণু মস্তিষ্কে ঢুকে মেনিনজাইটিস্ বা এনকেফেলাইটিস (মস্তিষ্কের ইনফেকশন) এর মতো সাংঘাতিক বিপদ ডেকে আনতে পারে। ৩) এলার্জিক বা অন্য রাইনাইটিসের ক্ষেত্রে আন্টিহিস্টামিন (সেট্রিজীন জাতীয় ওষুধ), নাকের স্টেরয়েড বা অন্য স্প্রে, স্যালাইন নাকের ড্রপ বা স্প্রে বা ওয়াশ ইত্যাদি ব্যবহার করে সাময়িক নিরাময় হয়। ৪) ওষুধের বা নেশার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় হলে তা বন্ধ করা উচিত । (ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি ইনফেকশন জনিত কারণে নাকের জল মিউকাস বা পুঁজ মিশ্রিত হয় বলে ‘জলের মতো’ হয় না। এই আলোচনায় তাই এদেরকে ধরা হয়নি। মতামত ব্যক্তিগত। সাধারণ মানুষের সচেতনতার উদ্দেশ্যে যথা সম্ভব ‘চিকিৎসা পরিভাষা’ বর্জন করে এই লেখা। সমস্যা হলে আপনার কাছের নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)

0

নাক দিয়ে জল পড়া Read More »

কানে দুল ফোটানোর সমস্যা – কেলোয়েড

প্রশ্ন : কেলোয়েড কী? উত্তর : শরীর নিজের ত্বকের কোনো অংশের ক্ষত নিরাময়ের চেষ্টায় অতিরিক্ত সক্রিয় হতে গিয়ে সেই স্থানকে মাংসপিন্ডের মতো ফুলিয়ে ফেললে তাকে কেলোয়েড বলে। প্রশ্ন : কেলোয়েড কি তাহলে টিউমার? উত্তর : একদমই নয়। শুধু তাই নয়, ‘কসমেটিক’ বা দেখতে খারাপ লাগার মানসিক সমস্যা ছাড়া কেলোয়েড শরীরের কোনো ক্ষতিই করে না। শরীরের ক্ষত নিরাময় করতে ‘কোলাজেন’ নামে এক ধরণের প্রোটিন লাগে। এই কোলাজেন ক্ষত জায়গায় পৌঁছে সেই জায়গাকে আগের মতো স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে ভুলভাল করে ফেললেই ঐ জায়গা উঁচু হয়ে ফুলে যায়। এটাই কেলোয়েড। প্রশ্ন : কানে কেন কেলোয়েড হয়? উত্তর : কেলোয়েড কেন হয় তার যেমন নির্দিষ্ট উত্তর আজও জানা নেই তেমনি কান, মুখ, কাঁধ বা বুকেই কেন বেশি কেলোয়েড হয় সেটাও জানা যায়নি। কান যেহেতু প্রায় সব দেশের মেয়েদের ক্ষেত্রে দুল পরার জন্য ফোটানো হয় তাই মুখমন্ডলের মধ্যে কানের লতিতেই কেলোয়েড বেশি হয়। তবে এর সাথে বংশগত কারণ এবং গাঢ় রঙের ত্বকেরও যোগ আছে। প্রশ্ন : কানের কেলোয়েড হলে কি করবেন না? উত্তর : ১) প্রথম উত্তরটাই হল, একবিন্দু ভয় পাবেন না। কানের দুল ফোটানোর জায়গায় সর্ষে বা মটরশুটির দানার মতো শুরু হয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেলোয়েড মার্বেল বা আরও বড় আকার নিতে পারে। এগুলো দেখতে সাধারণত গোলাকার হয়, কিছু ক্ষেত্রে নরম, কিছু ক্ষেত্রে শক্ত। এতে কোনো ব্যথা থাকে না তবে ওখানকার চামড়ায় একটা অস্বস্তি বা চুলকানি থাকতে পারে। ২) কোনোরকম ওষুধপত্র খেয়ে এটাকে ‘গলানোর’ পাগলামি করবেন না। ওষুধ খেয়ে ‘গলিয়ে’ দেবার তত্ত্ব নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করে মাথা ব্যথাই জুটবে । ৩) সেঁক বা মলম লাগাবেন না। এতে কোনো লাভ নেই। প্রশ্ন : তাহলে কেলোয়েড নিয়ে কি করা উচিত? উত্তর : ১) প্রথমেই দুশ্চিন্তা কমাতে আপনার চিকিৎসকের কাছে গিয়ে অসুখ সনাক্ত করুন যে এটা কেলোয়েডই। চিকিৎসকই আপনাকে বলে দেবেন যে এটি কোনো ক্ষতিকারক ‘বৃদ্ধি’ নয় এবং এর চিকিৎসা কোন ‘ইমার্জেন্সি’ নয়। ২) কানের কেলোয়েড খুব ছোট হলে বহুক্ষেত্রেই চিকিৎসা করার পরামর্শ দেওয়া হয় না, এর কারণ কানের লতির পিছনে, চুলের আড়ালে একে খুঁজে পাওয়া বাইরের কারো পক্ষে সম্ভব নয়। ‘কসমেটিক ভ্যালু ‘ না থাকলে একে না খোঁচানোই ভালো। চিকিৎসা শাস্ত্রের নিয়ম না মেনে এমন কিছু করতে গেলেই সেই খোঁচাখুঁচির জায়গার কোলাজেন আরও সক্রিয় হয়ে কেলোয়েডকে বাড়িয়ে দিতে পারে। ৩) কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক খুব ছোট কেলোয়েডের ভিতরে নির্দিষ্ট ‘স্টেরয়েড’ ইনজেকশন ‘ডায়াবেটিস’ রোগীর ইনসুলিন নেবার সিরিঞ্জ দিয়ে সপ্তাহে একবার করে মোটামুটি চার থেকে ছয় সপ্তাহ দেন। এতে কেলোয়েড প্রায় মিলিয়ে যায়। তবে এ চিকিৎসা একদম শুরুর দিকেই করা উচিত। ৪) কেলোয়েড বড় হয়ে গেলে এবং রোগী একে বাদ দিতে চাইলে কানের ঐ অংশকে অবশ করে কেলোয়েডকে খুব ‘যত্ন’ করে নাক কানের চিকিৎসক কেটে ফেলেন এবং কয়েকসপ্তাহ পর থেকে আগে যেভাবে বলা হয়েছে সে ভাবেই ইনজেকশন দিয়ে আবার কেলোয়েড হওয়াকে আটকে দেন। প্রশ্ন : কেলোয়েড যাতে না হয় তার জন্য কি করণীয়? উত্তর : সেই অর্থে কিছুই করার নেই। তবে দুল পরার জন্য কান ফোটাতে চাইলে বয়স যত কম হয় ততই ভালো, কারণ শরীরের এই সব উল্টোপাল্টা ‘রি-অ্যাকশন’ বয়স বাড়লেই বেশি হয়। প্রশ্ন : তাহলে কি কান ফোটাতে চিকিৎসকের কাছেই যাওয়া উচিত? উত্তর : এর কোনো মানেই নেই। অনেক নাক কান গলার চিকিৎসক দুল পরার জন্য কান ফোটাতেই চান না। কেলোয়েড যদি হবার হয় তবে বাড়িতে মা, ঠাকুমা, দিদিমা বা ‘বিউটি পার্লারের’ কর্মী অথবা চিকিৎসক – যে কারোর কাছে কান ফোটালেই সে ঠিকই হাজির হবে। একটা বিষয়ই শুধু কান ফোটানোর সময় বিবেচ্য- যথা সম্ভব জীবাণুমুক্ত পদ্ধতি যেন মেনে চলা হয়। এ লেখার শেষে একটাই উপদেশ দেওয়া যেতে পারে। সেটা হল, কেলোয়েড নিয়ে কেউ মাথা খারাপ করবেন না। এমন সমস্যা হয়েছে ভাবলে আপনার কাছের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

0

কানে দুল ফোটানোর সমস্যা – কেলোয়েড Read More »

কানে শোনা

আমার অগ্রজ, বিখ্যাত স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইন্দ্রনীল সাহার প্রশ্ন নিয়েই আমাদের এবারের চিকিৎসা আলোচনা চালাবো বলে মনস্থির করলাম। ইন্দ্রনীলদার প্রশ্নটা আমাকে মাঝে মাঝেই শুনতে হয়, আমার চেম্বারে, রসিক রোগীদের সাথে হালকা আলোচনায় এবং অবশ্যই ইন্দ্রনীলদাদের মতো চিরযুবক চিকিৎসকদের সাথে দুটো সার্জারির মাঝে সার্জনস রুমে ‘দূর্দান্ত, রসের’ আড্ডা মারতে মারতে। প্রশ্ন : ডাক্তারবাবু, বউ প্রশ্ন করলে কানে শুনতে পাই না! কেন এমন হয়? এর সমাধান কী জানাবেন?সম্ভাব্য উত্তর : চিকিৎসাবিজ্ঞান সদা পরিবর্তনশীল। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাও সদা বিভ্রান্ত। আজকে একদল যদি বলেন, এটা ঠিক, তো কালকে অন্যদল বলবেন, না ওটা ভুল। অন্য বিভাগের চিকিৎসকরা কী গবেষণায় মেতে আছেন তা আমার জানার কথা নয়, কিন্তু আমার বিভাগে যাঁরা ‘বউ প্রশ্ন করলে কানে শুনতে পাইনা কেন’ – এই নিয়ে গবেষণা করছেন, তাঁরা নিজেদের ভিতরের ‘ঠিক -ভুলের’ দ্বন্দ্ব স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেরাই মিটিয়ে নিয়েছেন। এই ‘অপূর্ব’ মিল-তালের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, ‘হ্যাঁ’ -এর দলের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ছিলেন বিবাহিত, আর ‘না’ -এর দলে অবিবাহিত। নিজেদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম না করে ‘হ্যাঁ’ -এর দলের বিজ্ঞানীরা ‘না’ -এর দলের অবিবাহিত বিজ্ঞানীদের বুদ্ধি করে শুধু বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিয়েছেন। আর এইটুকু কাজ করতেই দেখা গিয়েছে, এরা কেউই আর ‘বউ প্রশ্ন করলে কানে শুনতে পাইনা’ নিয়ে অহেতুক নিজেদের মধ্যে যেমন তর্ক করছেন না, তেমনি তার কারণ খোঁজার দিকে বা তার সমাধানের বের করার দিকে তেমন নজর আর দিচ্ছেন না। তার বদলে আমরা যেমন সার্জনস রুমে আড্ডা দিই, তাঁরাও তেমনই কর্মস্থলে নিজেদের মধ্যে রসের আড্ডায় মেতেছেন।আপাতত এর বেশি খবর আমার কাছে নেই। অতিরিক্ত কিছু মতবাদ উদ্ভাবন হলেই আমি নিশ্চিত ভাবেই আপনাদের জানাবো। কথা দিচ্ছি। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই একই সমস্যায় আমিও ভুগছি এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি চাইনা সত্ত্বর এর কোন সমাধান বের হোক। প্রশ্ন : আর যারা বউ বাদ দিয়ে বাকিদের কথাও শুনতে পান না?সম্ভাব্য উত্তর : এইটা বরং আলোচনার একটা বিষয়। এটারই বরং উত্তর দিই। বোঝার সুবিধার জন্য কানে শোনার সমস্যাকে আমরা দুটো ‘গ্রুপে’ ভাগ করে নিই।প্রথম, (১) শিশু (২) বৃদ্ধ এবং (৩) এই দুই বয়সের মাঝখানের মানুষদের কানে শোনার সমস্যা।দ্বিতীয়, (১) নার্ভ বা স্নায়ু দুর্বলতার জন্য (২) নার্ভ বা স্নায়ু ছাড়া অন্য সমস্যার জন্য কানে শোনার সমস্যা। প্রশ্ন : বয়সের হিসেবে মানুষদেরকে যেভাবে ভাগ করলেন, সেটা নিয়ে যদি একটু আলোচনা করা যায়, ভালো হয়।সম্ভাব্য উত্তর : আসলে প্রথম গ্রুপের মধ্যেই দ্বিতীয় গ্রুপ লুকিয়ে আছে। অর্থাৎ কিনা কানের স্নায়ুর দুর্বলতার জন্য অথবা কানের স্নায়ু সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা সত্বেও শোনার যে সমস্যা হয়, তা যেকোনো বয়সেই হতে পারে।স্নায়ু নিয়ে বলতে গেলে যেটা প্রথমেই মনে রাখতে হবে তা হলো, খুব ছোট বয়সে কানের স্নায়ুর দুর্বলতার জন্য যে শোনার সমস্যা হয় তা যেমন জন্মগত (congenital, intrauterine) হতে পারে, তেমনি জন্মের অব্যাবহিত পরেই জীবাণু সংক্রমণ, জন্ডিস, নিঃশ্বাসের কষ্ট (Hypoxia) – ইত্যাদি নানা কারণের জন্যও তা হওয়া সম্ভব।একটু বড় বয়সের বাচ্চাদের কানে শোনার স্নায়ুর দুর্বলতা সাধারণত জীবাণু ( virus- মামস , চিকেন পক্স , মিজলস ইত্যাদি অথবা bacteria-টাইফয়েড ইত্যাদি) সংক্রমণের কারণে হয়। এই ধরণের সমস্যা সাধারণভাবে হঠাৎ (sudden onset) করে শুরু হয়। শিশু চিকিৎসকের সাথে সাথে সন্তানের মা বাবার এ বিষয়ে সম্যক সচেতনতা না থাকলে বেশ কিছু ‘মূল্যবান সময় নষ্ট’ হওয়ার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাক-কান -গলার চিকিৎসকের পক্ষে কোনরকম সাহায্য করা এক্ষেত্রে সম্ভব হয় না কারণ শিশুদেরকে বহুক্ষেত্রেই আমরা বেশ কিছুদিন পরে পরীক্ষা করে দেখার জন্য কাছে পাই।একই সাথে একথাও অনস্বীকার্য, মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় অথবা জন্মের সাথে সাথে যদি বাচ্চার কানের স্নায়ুর দুর্বলতা থেকে থাকে, তবে তা ‘মূলে প্রতিহত’ করার কোন উপায়ই আমাদের কারোর কাছে থাকে না।বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে কানে শোনার সমস্যা সাধারণভাবে বয়স জনিত স্নায়ু দুর্বলতা থেকেই হয় (Presbyacusis)। কিছু ক্ষেত্রে অন্তঃকর্ণের বিশেষ কিছু অসুখের জন্য দুটি কানের মধ্যে একটি কানের স্নায়ু দুর্বলতাও লক্ষ্য করা যায়। এই ধরণের শোনার সমস্যা একটু একটু করে বৃদ্ধি পায়। এই অগ্রগতি প্রতিহত করার প্রমাণিত কোন চিকিৎসা এখনও নেই। প্রশ্ন : স্নায়ু দুর্বলতা ছাড়া আর যে যে কারণে কানে শোনার সমস্যা হয়, সেগুলো যদি একটু সহজ ভাষায় আলোচনা করা যায় তবে উপকার হয়।সম্ভাব্য উত্তর :গঠনের বিচারে (Anatomically) কানকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। বহিঃকর্ণ (outer ear) মধ্যকর্ণ ( middle ear) ও অন্তঃকর্ণ (inner ear)।অন্তঃকর্ণে স্নায়ু থাকে। সুতরাং তাকে আমরা এই আলোচনা থেকে বাদ দিয়ে বাকি দুটো ভাগ নিয়ে দুটো কথা বলি।বহিঃকর্ণ যদি ঠিকমতো গঠন না হয় ( atresia – তৈরি না হওয়া, stenosis – অত্যন্ত সরু হওয়া), সেখানে যদি ময়লা (wax -খোল), ছত্রাক বা সংক্রমণের জন্য পুঁজ জমে অথবা হাড়ের উপবৃদ্ধি ( Osteoma, Exostosis) হয়ে শব্দ ভিতরে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যায় তবে স্বাভাবিকভাবেই কানে শোনার ক্ষমতা কমে যায়।মধ্যকর্ণের ক্ষেত্রে যে সমস্ত সমস্যার কারণে আমরা কানে কম শুনি সেগুলো হলো,১) কানের পর্দায় (Tympanic Membrane) ছিদ্র হয়ে যাওয়া২) কোন কারণে পর্দার উপরে ক্যালসিয়াম জাতীয় খনিজের আস্তরণ তৈরি হওয়া (Tympanosclerosis)৩) নাক কান যোগাযোগ রক্ষাকারী টিউব (Eustachian tube) ঠিকমতো কাজ না করায় কানের পর্দার নিজের অবস্থান থেকে সরে আসা (Retracted)৪) পর্দার পিছনে মধ্যকর্ণে ‘জল বা শ্লেষ্মা’ জাতীয় পদার্থ জমে যাওয়া (Secretory otitis media)৫) পর্দার পিছনে থাকা শোনার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তিনটি হাড়ের অথবা তাদের নিজেদের মধ্যে সংযোগস্থলের গঠনগত সমস্যা ( deformity, ankylosis, fixation) এছাড়াও আরো অনেক কারণ আছে যেখানে বহিঃকর্ণ ও মধ্যকর্ণের সমস্যার কারণে বাইরে থেকে শব্দতরঙ্গ কানের সুড়ঙ্গ, পর্দা বা শোনার হাড় হয়ে বয়ে গিয়ে স্নায়ুতে ঠিকমতো পৌঁছতে পারেনা এবং আমরা কম শুনি। তবে এই সমস্ত ক্ষেত্রে বধিরতা কখনোই ‘সম্পূর্ণ’ (complete) হয় না, আংশিক (partial) হয়। আজ এই পর্যন্তই থাক। পরে যতটুকু সহজ ভাবে সম্ভব কানে শোনার সমস্যা প্রতিহত করা (prevention) অথবা তাদের সম্ভাব্য সমাধানের বিষয়ে না হয় আলোচনা করা যাবে।

0

কানে শোনা Read More »

সদ্যোজাত ও খুব ছোট শিশুদের শোনার সমস্যা ও তার সমাধান – কিছু পরামর্শ

একটা নির্দিষ্ট বয়সের সময়সীমায় সাধারণ ভাবে যে শোনার সমস্যা হয়, তারই চিকিৎসা সম্পর্কে আমরা এই আলোচনা ভাগ করে নিচ্ছি। আজ নবজাতক ও খুব ছোটো শিশুদের নিয়ে বলবো। প্রশ্ন: আমার বাচ্চার বয়স ছয় মাস। বাচ্চা তো দিব্যি আছে। বুকের দুধ খাচ্ছে। শুয়ে শুয়ে নিজের মতো খেলছে। সব কিছু তাকিয়ে দেখে হাসছে। কিন্তু শিশু বিশেষজ্ঞ কেন বলছেন, কানে শোনার পরীক্ষা করিয়ে নিতে?সম্ভাব্য উত্তর: এর দুটো উত্তর হতে পারে। প্রথমটা মায়ের দিক থেকে। দ্বিতীয়টা বাচ্চার জন্ম নেয়া ও তার পরবর্তী সময়ে বাচ্চার শারীরিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। প্রশ্ন : মায়ের শরীর খারাপের সাথে বাচ্চার কানে শোনার সম্পর্ক আছে?সম্ভাব্য উত্তর : নিশ্চয়ই আছে। গর্ভাবস্থায় সন্তান যখন মায়ের পেটে থাকে তখন তো সে মায়ের শরীরেরই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। মায়ের কোন অসুখ বিসুখ হলো অথবা মা কোন শক্ত অসুখের জন্য ওষুধপত্র খেলেন – এই দুটি ক্ষেত্রেই বাচ্চার শরীরে তার প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। মায়ের শরীরে যদি কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়, যেমন ধরা যাক হেপাটাইটিস / জন্ডিস অথবা টাইফয়েড / টিবি, অথবা তার জন্য যদি দীর্ঘদিন ওষুধপত্র খেতে হয়, তবে সেসবের প্রভাব বাচ্চার কানের স্নায়ুর উপরেও পড়তে পারে। ফলে শোনার স্নায়ু দুর্বল হয়ে বাচ্চার জন্মের পরে কানে শোনার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব পরিস্থিতিতে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা শিশু বিশেষজ্ঞরা জন্মের পরেই বাচ্চার কানে শোনার ক্ষমতা ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখে নিতে বলেন। প্রশ্ন : আর জন্মের সময় বা পরে বাচ্চার ক্ষেত্রে?সম্ভাব্য উত্তর: সন্তান প্রসবের সময় যদি দীর্ঘ বিলম্ব হয় (obstructed labour), যদি প্রসবকালীন নানা সমস্যার জন্য বাচ্চার শরীরে অক্সিজেন প্রবেশ যথাযথ না হয় (hypoxia) অথবা আরও সহজ করে বললে, জন্মের সাথে সাথেই যদি বাচ্চা না কাঁদে (জীবনের প্রথম কান্না আসলে বেঁচে থাকার বার্তা – ফুসফুস হয়ে পৃথিবীর বাতাস /অক্সিজেন বুক ভরে শরীরের ভিতরে টেনে নেবার জানান দেওয়া), অথবা জন্ডিস (অতিরিক্ত) বা সেপসিস জাতীয় কোন জটিল সমস্যা তৈরি হয় তাহলে বাচ্চার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসককে সেই সব সমস্যা মোকাবিলা করার সাথে সাথে পরবর্তীকালে বাচ্চার কানের স্নায়ুর সবলতা/ দুর্বলতা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের জানিয়ে দিতে হয়। প্রশ্ন : তাহলে এ সবকিছুই কি ইমার্জেন্সি হিসাবে ভেবে নিয়ে করতে হবে?সম্ভাব্য উত্তর: একদমই নয়। বাচ্চা কানে ঠিকমতো শুনছে কী শুনছে না, সেটা একদিকে যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ তেমনি অন্যদিকে ইমারজেন্সিও নয়। আসলে সমস্যাটা অন্য জায়গায়।আমাদের শরীরের কিছু প্রতিবর্ত ক্রিয়া (reflex) আছে যেগুলো একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে নতুন করে আর কাজ করে না। ডাক্তারি পরিভাষায় একে “নিউরাল রিফ্লেক্স” (neural reflex) বলে। এর একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।ধরা যাক একটা গরু বা মহিষের বাচ্চা হলো। মায়ের পেট থেকে মাটিতে পড়েই প্রথমে সেই বাচ্চা কী করে? সে টলমল পায়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু বারবার পড়ে যায়। এভাবেই ক্রমাগত চেষ্টা করতে করতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাচ্চাটি নিজের পায়ের সোজা হয়ে দাঁড়াতে শিখে যায় এবং চলতে শুরু করে।এবার ধরা যাক তার জন্মের সাথে সাথেই যদি কোনো দড়ি দিয়ে তার চারটি পা আমরা বেঁধে রেখে দিই এবং বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে সেই বাঁধন খুলে দেওয়া হয়, তাহলে হাজার চেষ্টা করা সত্ত্বেও সেই গরু বা মহিষের বাচ্চা কিন্তু আর নিজের পায়ে খাড়া হয়ে দাঁড়াতে পারে না। অর্থাৎ কিনা জন্মের পরপরই যে “নিউরাল রিফ্লেক্স” পা থেকে মস্তিষ্কে গিয়ে বাচ্চাটিকে খাড়া হয়ে দাঁড়ানোর জন্য চেষ্টা করছিলো, তার ক্ষমতা একটা নির্দিষ্ট সময়ে পরেই নষ্ট হয়ে যায়। তাকে নতুন করে আর তৈরি করা যায় না।তেমনি আমাদের কানে শোনার ক্ষেত্রে জন্মের প্রথম চার পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের মুখে বলা কথা বা শব্দ যদি বাচ্চার মস্তিষ্কের শোনার জন্য নির্দিষ্ট অংশে গিয়ে না পৌঁছায়, তবে সেই শব্দ বা কথার অর্থ বোঝার ক্ষমতা মস্তিষ্কে আর কখনোই তৈরি হয় না। বাচ্চার কানে শোনার ক্ষেত্রে এটাই এক ধরণের “নিউরাল রিফ্লেক্স” এবং জন্মের ওই চার পাঁচ বছরের পরে তার আর নতুন করে কাজ করার ক্ষমতা থাকেনা । আমরা যা শুনি তাই বলি। ফলে এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাচ্চা কানে যদি একদম শুনতে না পায় তাহলে কথা বলতে শেখে না ও সারা জীবনের মতো বোবা হয়ে যায়।এই হিসেবে দেখলে যদি চিকিৎসক বা বাড়ির লোকজন সন্দেহ করেন, বাচ্চা কানে কম শুনতে পাচ্ছে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব কানের স্নায়ুর কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। প্রশ্ন : আচ্ছা, মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় যদি কোন সমস্যা না হয় অথবা বাচ্চার জন্মও যদি সুষ্ঠুভাবে হয়, তাহলেও কি বাচ্চা কানে কম শুনতে পারে?সম্ভাব্য উত্তর: নিশ্চয়ই পারে। বাচ্চার কানে শোনার সমস্যা তৈরি হওয়ার হাজারটা কারণ থাকতে পারে। প্রশ্ন : তাহলে সবকিছু ঠিকঠাক চললেও বুঝবো কি করে যে আমার বাচ্চা কানে শুনতে পাচ্ছে না? কি করে বুঝবো আমার বাচ্চাকে কানে শোনার বিষয়ে নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যেতে হবে নিয়ে যেতে হবে?সম্ভাব্য উত্তর: এক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন ধরা যাক, ঘরে জোরে রেডিও বা টিভির চললো বা কলিং বেল বাজলো, অথবা বাইরে কোন মোটরসাইকেল বা গাড়ি হর্ন দিল, অথবা বাচ্চার আড়ালে দাঁড়িয়ে কেউ বাচ্চাকে ডাকলেন অথচ উপরের কোন ক্ষেত্রেই বাচ্চা ওই শব্দের উৎসের দিকে চোখ বা মাথা ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা কোনোবারেই করলো না – এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে বৈকি।তাছাড়া খুব ছোট বাচ্চা হলে (মোটামুটি তিন মাসের মধ্যে) তার আশেপাশে যদি জোরালো শব্দ করা হয়, যেমন হাতের তালাটা মেঝেতে ফেলে দেওয়া হলো, বা হঠাৎ বেশ জোরে হাততালি দেওয়া অথবা চিৎকার করা হলো – এসব ক্ষেত্রে বাচ্চার কানে শোনার সমস্যা না থাকলে সে চমকে ওঠে (Moros reflex or Startle reflex)। এতেই মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায় আমাদের বাচ্চা কানে শুনতে পাচ্ছে। প্রশ্ন : এসব বাচ্চাদের কানে শোনার ক্ষমতা বোঝার জন্য কোন পরীক্ষা করা হয়? বাচ্চার জন্য সেসব কি কষ্টকর?সম্ভাব্য উত্তর: কোন পরীক্ষা কোন ক্ষেত্রে করতে হবে সেটা সাধারণভাবে আপনার নাক কান গলা চিকিৎসক আপনাকে জানিয়ে দেবেন। তবে BERA (Brain Evoked Response Audiometry) পরীক্ষাটি করার চল সবথেকে বেশি।আপনার শিশুর জন্য এ পরীক্ষা কষ্টকর নয়। ‘ই সি জি (ECG)’ করার জন্য শরীরে যেমন দু-চারটে তার লাগিয়ে দেয়া হয়, ঠিক তেমনি শিশুর মাথায় কপালে তার (ইলেক্ট্রোড ) লাগিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়। সেই সময় শিশুকে ঘুমাতে হয়। প্রশ্ন : বাচ্চার কানে শোনার স্নায়ু দুর্বল হয়ে গেলে সে কি তাহলে আর কোনোভাবেই শুনতে পাবে না? কথা বলাও শিখবে না?সম্ভাব্য উত্তর : একদমই নয়। এসব কিছুরই সমাধান এখন আছে। নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসা করলে কানে শুনতে না পাওয়া প্রায় সমস্ত বাচ্চাকেই “মেইনস্ট্রিমে” নিয়ে আসা সম্ভব।কানে শোনার সমস্যা শনাক্ত হওয়া মাত্রই বাচ্চাকে কানের মেশিন ব্যবহার করানোর প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়াও “ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট” অপারেশনের মাধ্যমে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে শব্দ পৌঁছে দিয়ে বাচ্চাকে এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এ অপারেশন অনেকটা আমাদের হার্টের “পেসমেকার” বসানোর মতো। তবে খুব তাড়াতাড়ি এ সমস্ত কাজ না করে ফেলতে পারলে একটা

0

সদ্যোজাত ও খুব ছোট শিশুদের শোনার সমস্যা ও তার সমাধান – কিছু পরামর্শ Read More »

কানের পেসমেকার

বধিরতা আমাদের জীবনে এক চূড়ান্ত দুর্ভাগ্যজনক অভিশাপ। বয়সকালের বধিরতার থেকেও জন্মগত বা জন্মের ঠিক অব্যবহিত পরেই আসা বধিরতা আরও দুঃখের । এর কারণ, বয়সকালের বধিরতায় জীবনে একবার কথা বলতে শেখার পরে বধিরতা আসে বলে তাতে নিজে কথা বলতে বা অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টায় কোনো অসুবিধা হয় না । কিন্তু ‘জন্ম থেকে’ই থাকা বধিরতায় আমরা যেহেতু কানে কিছুই শুনতে পাই না, তাই কথা বলতেও শিখি না। এটা অনেকটা ছড়া বা নামতা মুখস্ত করার মতো ব্যাপার । শিক্ষক বা অভিভাবক বাচ্চাকে পড়াতে বসে মুখে মুখে যা বলছেন, বাচ্চা কানে শুনে শুনে তাই উচ্চারণ করছে ও মানে বোঝার চেষ্টা করছে এবং সেসব শব্দ শিখে নিচ্ছে । আমাদের মস্তিস্ক হল কম্পিউটারের ‘হার্ড ডিস্ক’। যা ‘লোড’ করা হবে, তাই থেকে যাবে আমৃত্যু । পার্থক্য হল, ‘কথা শোনা’ ও তার অর্থ বুঝে নিজের মুখে উচ্চারণ করার ক্ষমতা জন্মের পর থেকে শুরু করে সারাজীবন আমাদের থাকে না । জীবনের প্রথম ৩-৪ বছরের মধ্যেই কোনো ‘স্টিমুলাস’ বা ‘উদ্দীপনা’ কানের মাধ্যমে মস্তিষ্কের শোনার ও বোঝার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় না পৌঁছালে পরবর্তী কালে শব্দ শুনলেও তার অর্থ বোঝার ক্ষমতা চিরতরে নষ্ট হয়ে যায় । ফলে, মস্তিস্ক শব্দ হয়তো পায়, কিন্তু তার কোনো অর্থ নির্ধারণ করতে পারে না। উদাহরণ হিসাবে সত্যিকারের ‘জাঙ্গল বুকে’র মোগলীর কথা ধরা যেতে পারে । উত্তরপ্রদেশের বুলান্দশর জেলার জঙ্গলে যখন তাকে নেকড়ে বাঘের ভিতর থেকে জোর করে ছিনিয়ে আনা হয়, তখন তার বয়স ছয় । অনাথ আশ্রমে সে শনিচর নাম পেয়ে ৩৪ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিল । নেকড়ে বাঘের মধ্যে থেকে সে তাদের মতোই চার হাতেপায়ে চলা বা কাঁচা মাংস খাবার বা তাদের মতোই গুটিসুটি মেরে শোবার যে স্বভাব পেয়েছিল, পরবর্তীকালে খুব ধীরে ধীরে হলেও তার কিছুটা পরিবর্তন হয়, কিন্তু নেকড়ে বাঘের মতো গর্জন করার স্বভাব যেমন তার যায় নি, তেমনি সে কোনোদিনও মানুষের কথা আর বুঝতে পারেনি । আসলে তার মস্তিস্ক এসব শেখার সময় সীমাকে পিছনে ফেলে এসেছিল । একেই ‘নিউরাল রিফ্লেক্স ‘ বলে, যা নির্দিষ্ট বয়সের পরে আর শেখা যায় না। জিনগত বা বংশগত কারণ ছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মানো, দীর্ঘক্ষণ প্রসবকালীন সমস্যা, মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম সঞ্চালন, জন্ডিস, ভাইরাস সংক্রমণ, সেপসিস ইত্যাদি নানা কারণে নবজাতক জন্মপরবর্তী জীবনে সম্পূর্ণ বধির হতে পারে এবং কথা বলা শেখে না । এমন অবস্থায় যত শীঘ্র বাচ্চার চিকিৎসা শুরু করা যায় ততই ভালো । কারণ নিউরাল রিফ্লেক্স ‘ এবং তার ঐ ‘সময় সীমা ‘। ৩-৪ বছরের পরে যে কোনো ভাবে কানে শুনলেও মস্তিষ্কে তা বোঝার আশানুরূপ ‘ফল’ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমাগত কমতে থাকে। চিকিৎসার শুরুতেই কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার গুরুত্ব অনুধাবন করে কানে শোনার মেশিন ব্যবহার করা হয় বাচ্চার মস্তিষ্কে যে কোনো ভাবে ‘শব্দ’ পৌঁছানোর জন্য । কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই বধিরতা মেশিনের কার্যক্ষমতার বাইরে চলে যায় । তখন উপায়? উপায় আছে। ‘ককলিয়ার ইমপ্লান্ট‘ (Cochlear Implant)। সেটা কী? হৃদপিন্ডের ছন্দ বা ‘গতি’ যদি ক্রমাগত কমতে থাকে, তাকে আমরা বলি হার্ট ব্লক । এ ব্লক রক্ত সঞ্চালনের ‘ব্লক’ নয়। যে ‘ইলেকট্রিক ইমপালস’ বা ‘কারেন্ট’ হৃদপিন্ডকে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য নির্দিষ্ট গতিতে ‘পাম্প’ করতে নির্দেশ পাঠায়, তার কর্মক্ষমতা কমে গেলে হৃৎপিন্ডের গতি কমতে থাকে এবং শরীরে / মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন/ অক্সিজেন প্রবাহ কমে গিয়ে আমরা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারি, এমনকি আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত হয় । এর জন্য আমাদের শরীরে ‘পেস মেকার’ বসানো হয় । হৃদপিন্ড তার নির্দিষ্ট গতি ফিরে পায় । আমরা কাঙ্খিত জীবনে ফিরে আসি। ঠিক এমন করেই কানের সম্পূর্ণ বধিরতায়ও এখন আমরা ‘পেস মেকার’ ব্যবহার করি । একেই ‘ককলিয়ার ইমপ্লান্ট ‘ বলে । এর যথার্থ ব্যবহারে জন্ম থেকে বধিরতায় ভোগা বাচ্চা অন্য বাচ্চার মতোই কানে শুনে কথা বলা শেখে ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। আজ একথা লেখার উদ্দেশ্য দুটি-প্রথমত, অবশ্যই সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, যাতে ‘বোবা-কালা’ অভিশাপ কারো জীবনে না থাকে।দ্বিতীয়ত, আজ রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে এর উপরে যে ওয়ার্কশপ চলছে, এবং এ কাজ যে ক্রমাগত কলকাতা শহরে সাফল্যের সঙ্গে হয়ে চলেছে, সে সম্বন্ধেও এ শহরের মানুষের মনে সেই একই সচেতনতা নিয়ে আসা। সবশেষে বলি, এমন বহু অসুখ আছে যাদেরকে কেবলমাত্র সচেতনতা দ্বারাই প্রতিহত করা অথবা সাফল্যের সাথে চিকিৎসা করা সম্ভব । কানে শোনার সমস্যা এমনই একটি । সবাই এ সম্পর্কে সচেতন হোন এবং পাশের মানুষকেও সচেতন করুন।

0

কানের পেসমেকার Read More »

মাছের কাঁটা

এ অভিজ্ঞতা মাছ খাওয়া মানুষ মাত্রেরই জীবনে কখনো না কখনো হয়েছে এবং গলার কাঁটা বার করা নিয়ে নানা কান্ডকারখানা আমরা সবাই কিছু না কিছু করেছি। ❓ প্রশ্ন : গলায় কাঁটা কেন আটকায়? ✅ উত্তর : গলার ভিতরের যে দেওয়াল তার আবরণ খুবই নরম। এই দেওয়ালের উপরের দিকে নির্দিষ্ট জায়গায় যেমন টনসিল থাকে তেমনি তার নিচের দিকেও ‘এপিগ্লটিস’ নামের পাতার মতো ঢাকনা শ্বাসনালীর উপরে ছাতার মতো চেহারায় বসে থাকে । এছাড়াও জিভের গোড়ায় এবং গলার বাকি গোটা দেওয়াল জুড়ে অজস্র ছোট ছোট লসিকা গ্রন্থিও কমবেশি অসমান ভাবে ফুলে থাকে। ইনফেকশন জনিত ঠান্ডা সর্দি, এলার্জি বা অ্যাসিড রিফলাক্স বেশি হলে উপরে বলা অংশগুলি বহু সময় বেশি ফুলে যায় ও খাবার চলাচলের পথকে ছোট করে দেয়। শুধু তাই নয়, প্রদাহের (inflammation) ফলে এই ফোলা দেওয়াল স্পঞ্জের মতো আরও নরম হয়ে যায় বলে এখান দিয়ে যাবার সময় কাঁটা সহজেই বিঁধে যেতে পারে।টিভি বা মোবাইল দেখতে দেখতে অথবা গল্প করতে করতে অথবা তাড়াহুড়ো করে অন্যমনস্কভাবে খাবার সময় যেহেতু মুখের ভিতরের অনুভূতির দিকে তত খেয়াল থাকে না, তাই সেক্ষেত্রেও কাঁটা ফোটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ❓ প্রশ্ন : মাছের ধরণের উপরে কি কাঁটা বিঁধে যাওয়া নির্ভর করে? ✅ উত্তর : নিশ্চয়ই করে। কিছু মাছের কাঁটা বড় হলেও খুব নরম (যেমন পাবদা), আবার কিছু মাছ ছোট হলেও কাঁটা ভীষণ শক্ত ও ধারালো ( যেমন ট্যাংরা, কই, পুঁটি ইত্যাদি)। ফলে প্রথম ক্ষেত্রে কাঁটা কোনো সমস্যা না করলেও পরের ক্ষেত্রে সতর্ক না হলে অবধারিত ভাবে গন্ডগোল বাঁধাবেই। একইসাথে মাছের দেহের এক এক অংশের কাঁটার চেহারা এক এক রকম হয় । যে কাঁটার ডগা ইংরেজি Y অক্ষরের মতো, গলায় তার ফুটে যাবার প্রবণতা বেশি (যেমন কাটা পোনার পেটির একদম নিচের দিক ও লেজের কাঁটা)। ❓ প্রশ্ন : মাছের কাঁটা গলায় ফুটলে কী করবেন না? ✅ উত্তর :১) বিন্দুমাত্র আতঙ্কিত হবেন না। গলায় কাঁটা বিঁধে গেলে প্রবল অস্বস্তি হওয়াটাই স্বাভাবিক। যে কটা কাঁটা সারাজীবনে আপনার গলায় বিঁধতে পারে তার থেকে সহস্রাধিক কাঁটা নিজের অজান্তেই আপনি গিলে ফেলেছেন এতদিনে। এরা পেটে কোথাও বেঁধে থাকেনি, আপনার ক্ষতি করেনি। তাই গলায় বিঁধে যাওয়া কাঁটা আপনার কষ্ট সাময়িক বাড়ালেও অন্য কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।২) কাঁটা ফুটে খচখচানিতে বমি হয়ে যেতে পারে। এতে সময় সময় কাঁটা বেরিয়ে যায় কিন্তু নিজে গলায় আঙ্গুল পুরে বমির চেষ্টা করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কাঁটা আরও গভীরে ঢুকতে পারে।৩) অনেকে কলা, শুকনো ভাত বা রুটি ইত্যাদি খেয়ে কাঁটা নামানোর চেষ্টা করেন। এতে কখনো কখনো হালকা ভাবে বিঁধে থাকা কাঁটা উঠে এসে পেটে চলে যায়। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। এর বেশি কোনো অত্যাচার গলার উপরে না করাই ভালো।৪) কোনো ওষুধ খেয়ে কাঁটা গলানোর চেষ্টা করবেন না। অ্যাসিড জাতীয় দ্রব্য হয়তো কাঁটাকে নরম করে দিতে পারে কিন্তু একবার যুক্তি দিয়ে ভেবে দেখুন, যে ‘পদার্থ’ খেয়ে আপনি কাঁটা গলাতে নেমেছেন সে অত শক্ত একটা কাঁটাকে বেছে বেছে গলিয়ে দিল আর আপনার মুখের ভিতরের পাতলা দেওয়াল, রক্ত চলাচলের সূক্ষ্ম শিরা উপশিরা অথবা নরম মাংস ও গ্ল্যান্ড – এদের উপরে কোনো কাজ করল না, একি সম্ভব? তাহলে মোদ্দা কথা হল, ওষুধ খেয়ে কাঁটা গলে না।৫) কাঁটা ফোটার বেশ কিছু দিন পরেও মাথায় ভূতুড়ে চিন্তা থেকে থেকে ফেরত নিয়ে আসবেন না। কাঁটার হাত পা নেই। সে গলার এই দেওয়াল ঐ দেওয়ালে নড়েচড়ে দিনের পর দিন বেড়াতে পারে না। দিন তিথি মেনে সে হঠাৎ হঠাৎ মাথা চাড়া দিয়ে ঠেলে উঠতেও পারে না। ঝাড়িয়ে সাপের বিষ বা মাছের কাঁটা – এসব নামানোর পিছনে সময় নষ্ট করা মানে অজ্ঞানতার হাত ধরে ক্ষতিকে ডেকে আনা।৬) খরচ সাপেক্ষ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও কাঁটা আছে বা নেই – একথা বলা সিংহভাগ ক্ষেতে সম্ভব নয় । এ কারণে ওসব পরীক্ষার পিছনে ছোটা সাধারণভাবে নিষ্প্রয়োজন। ❓ প্রশ্ন : গলায় কাঁটা ফুটলে কী করব? ✅ উত্তর :১) একটু ধৈর্য রাখুন। ডাক্তারি পরামর্শের বাইরে হলেও যে খাবারের সাথে খেতে খেতে মাছের কাঁটা ফুটেছে সেই ভাত, রুটি ইত্যাদি অথবা জল কয়েকবার গিলে দেখতে পারেন। একইভাবে কয়েকবার সামান্য জোরে গলা খ্যাকারী বা কাশি দিয়ে কাঁটা বেরোয় কিনা চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। কিন্তু আগেও বলেছি, ঐ পর্যন্তই। এর বেশি নয়।২) সমস্যা না মিটলে আপনার কাছের নাক কান গলার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন। সময় সময় তাঁর পক্ষে কাঁটা ফুটে থাকলেও দেখতে পাওয়া নাও যেতে পারে। এটা হয় রোগীর গলায় বমির মতো রিফ্লেক্স (gag reflex) বেশি থাকলে, কাঁটা গলার বেশি নিচে আটকে গেলে এবং অবশ্যই ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তাদের ভয়জনিত কারণে ভালো করে দেখার সুযোগ না দেবার জন্য। কিছু ক্ষেত্রে নিঃসংশয় হবার জন্য গলার ভিতরে এনডোস্কোপ দিয়ে দেখা হয়। এই পরীক্ষা রোগীকে বসিয়ে করা হয় এবং একটুও কষ্ট হয় না এতে।যাই হোক না কেন, কাঁটা গলায় ফুটে থাকলে এভাবেই বোঝা যায় এবং কাঁটা বের করে দেওয়া হয়।৩) যে যে কারণের জন্য গলায় কাঁটা ফুটতে পারে, তাদেরকে নিরাময় করুন। কাঁটার ভয়ে মাছের মতো এত সুস্বাদু ও উপাদেয় খাবার থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার কোনো যুক্তি নেই। (নাক কান গলার চিকিৎসক হিসেবে সাধারণ মানুষের সতর্কতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য নিয়ে এই লেখা। মতামত সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। আপনার কাছের চিকিৎসকের উপরে আস্থা রাখুন।)

0

মাছের কাঁটা Read More »

error: Content is protected !!