drsajalsur

পূর্বরাগ

একপেট ভাত খেয়ে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে জানালা দিয়ে ভেসে আসা শীতের দুপুরের নরম রোদ্দুরে ঢুলুঢুলু চোখে, পেটে খেয়ে মনের আরামকে একটু অনুভব করার চেষ্টা করছিল গদানন। বন্ধ চোখেই মনের আন্দাজে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনীর চিমটেতে উপরের ডান মাড়িতে সদ্য মাথা তোলা আক্কেল দাঁতের গোড়ায় আটকানো পুঁটি মাছের মাথা থেকে ভাঙা ছোট্ট কাটাটা সে একই সাথে বের করার একটা ঢিলেঢালা চেষ্টাও চালাচ্ছিল। এরই মধ্যে ডানপাশে বসা গৌরাঙ্গের বামকুনইয়ের একখানা মোক্ষম খোঁচা গদানুনের ডান পাঁজরে লাগতেই তার সব শান্তির পিন্ডি চটকে গেল। — এই গদা, সোজা হয়ে দাঁড়া! অলীক স্যার এসেছেন।গৌরাঙ্গ ফিসফিসিয়ে গদাননকে বলল।মফস্বলের স্কুল। ক্লাস শুরুর ঘন্টা পড়তেই টিফিন পিরিয়ডের শিয়াল কুকুরের মত চিৎকার চেঁচামেচি শেষ হয়ে উড়ন্ত প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড সব ভোমরাদের মতো যে গুঞ্জন চলছিল সেটাও এবার নিশ্চুপ হয়ে গেল। এক পাল্লা ভাঙা দরজা পেরিয়ে অলীক স্যার ক্লাসরুমে এসে টেবিলের সামনে দিয়ে গিয়ে জানলার ধারে দাঁড়িয়ে পড়লেন। ক্লাসের সবাই জানে এবার তিনি খোলা জানালা দিয়ে আকাশটাকে এক মনে মিনিট কয়েক দেখবেন। তারপর ফিরে এসে ব্ল্যাকবোর্ডের সামনের চেয়ারটাতে বসে পড়ানো শুরু করবেন। এটা অলীক স্যারের নিত্যদিনের রুটিন। এগারো ক্লাসের সব ছেলেরা বহুদিন ধরেই এতে অভ্যস্ত। অলীক স্যার ভীষণ রাগী। তবে কোন মানুষ কি আর পুরোটাই দোষে ভরা হয় কখনো? মানুষ মাত্রই কিছু না কিছু মান আর হুশ তো থাকবেই রে বাবা! তাই না সে মানুষ? সেই নিয়মে অলীক স্যারের অনলের মত রাগ যদি দোষ হয় তবে গুণের কথাটাও বলে নেওয়া ভাল। ক্লাসে এসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে খানিক চেয়ে যদি অলীক স্যারের মনে একবার ভাবের সঞ্চার হয় তবে দুনিয়া রসাতলে গেলেও অলীক স্যারের মতো ভাল মানুষ শিক্ষক এই স্কুলে আর নেই। স্যার নিজের ভাবে একটানা তাঁর বাংলা ভাষার ক্লাস নিয়ে যাবেন, শুধু তাঁকে বিরক্ত না করলেই হল। ক্লাসে গন্ডগোল না করলে কে কি করল আর না করল তা আর অলীক স্যারের গ্রাহ্য করার আওতায় পড়ে না। টিফিনে বড় কৌটো থেকে পেট ভরা ভাত খেয়ে গদানন ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসে বরাবরই ঘুমের রাজ্যের সীমানায় ঘুরে বেড়ায়। তাই অলীক স্যার আর এই দুজনের স্বার্থ বা ভাললাগা কখনো একে অন্যের বেড়ে ওঠায় এখনও বাধা প্রদান করেনি। ডান পাঁজরে গৌরাঙ্গের জোরালো খোঁচা খেয়ে গদানন কোনরকমে উঠে দাঁড়ালো কিন্তু পুরো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারল না। ঘুমটা এখনো যেন চোখের নিচের পাতায় এসে দোল খাচ্ছে। বরাবরের মতো এই দোল খাওয়া থামিয়ে এই ঘুম যে এখন কোনমতেই চোখের পাতা ছেড়ে নিচে ছিঁড়ে পড়বে না তা গদানন ভালই টের পাচ্ছিল। এখন শুধু একটাই অপেক্ষা, কখন অলীক স্যার পড়ানো শুরু করবেন। গদানন জানে স্যারের পড়ানো শুরু হলেই ওর ঘুমটাও একটা সামারসল্ট দিয়ে উপরে চোখের পাতাকে আঁকড়ে ধরে ঘুম পাড়ানির দেশে ঠিক তাকে নিয়ে পৌঁছে যাবে। অলীক স্যার বেশ রোগা আর খানিকটা লম্বা। বরাবরই ধুতি-পাঞ্জাবি পরে স্কুলে আসেন। সাদা ধবধবে পাট ভাঙ্গা ধুতিতে দেখতে বেশ লাগে মানুষটাকে। সমস্যা শুধু স্যারের মনের ভাব আর রাগী মেজাজটাকে নিয়ে। এ দুটো একসাথে চলতে একেবারেই শেখেনি। তবে একটা ব্যাপার এই বাংলা ক্লাসে বরাবর একই রকম চলছে। সেটা হল, যবে থেকে অলীক স্যার ক্লাসে কবিতা পড়াচ্ছেন তবে থেকেই তিনি কবিতাগুলোর ভাব বিশ্লেষণ নিয়ে অনুভূতির মহাসমুদ্রে সপ্তডিঙ্গা ভাসিয়ে দিয়েছেন। আর যতই পড়াচ্ছেন ততই সে ডিঙ্গা যেন তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছে, থামতেই চাইছে না। ‘রাধার কি হইলো অন্তরে ব্যথা’।অলীক স্যার রাধাকৃষ্ণের প্রেম জীবনের প্রথম পর্যায়ে পূর্বরাগের শুরুর লাইন গুলো বলতে শুরু করলেন। ক্লাস যথারীতি নিশ্চুপ হয়ে রইল। গদাননের উপর ও নিচের চোখের পাতা একে অন্যের হাত ধরাধরি করে নিল। কিছুতেই আর তাদের প্রেমকে আলাদা করে রাখা গেল না। গদাননের মনে তখন খালি ওর মায়ের মুখখানা আর তাঁর ভাসা ভাসা কথা তিরতির করে কেঁপে কেঁপে উঠছিল-— ওরে গদা, সারাদিন খাচ্ছিস তো, কিন্তু ইস্কুলের টিফিনেও এত ভাত আর খাস না রে বাবা ! বেশ একখানা শিরশির হাওয়া আসছিল জানলা থেকে। গদানন সেই হাওয়ায় এক পেট ভাতের উপরে ভর করে ঘুমের রাজ্যে দিব্যি ভেসে ভেসে উড়ছিল। গদাননের পাশ দিয়ে নরম নরম ফোলা ফোলা হাওয়াই মিঠাইয়ের মত মেঘগুলো সাঁতার দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। অনেক নিচে সবুজ পৃথিবী। সেখানে ধানের ক্ষেতে সোনা রঙ ধরেছে। আর ক’দিন পরেই ধান পাকবে। পাকা ধান কাটা হবে। ধান থেকে চাল বেরোবে। চাল ফুটে ভাত। সেই গরম ভাতের থালা নিয়ে গদানন তৃপ্তি করে বসে খাবে। দিব্যি চলছিল স্বপ্ন। হঠাৎ কোত্থেকে একটা দাঁড় কাক উড়ে এসে বিচ্ছিরি জোরে ঠকাশ করে গদাননের মাথায় এক রাম ঠোক্কর মেরে বলল,— হতচ্ছাড়া, নাক ডাকিয়ে ঘুমানো হচ্ছে? অলীক স্যারের তেমন কোন দোষ ছিল না। স্যার তো ভাবের ঘোরে দিব্যি পড়াচ্ছিলেন । পূর্ব রাগের প্রেম স্যারের কথায় ঝরে ঝরে পড়ছিল আর ক্লাসরুমে বর্ষার ময়ূরের মত পেখম তুলে নাচছিল। সব নাচানাচির বারোটা বাজিয়ে দিল গদাননের নাকের ওই দশাসই গর্জন। একটানা কবিতাটা পড়ানো স্যারের শেষ হয়েছিল কিন্তু এমন ভাবাবেগকে কি সহজে ছেড়ে দেওয়া যায়? তাই অলীক স্যার কোনদিনও যা করেননি আজ সেটাই করে ফেললেন। কবিতার অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরে মন দিলেন। তিনি পূর্বরাগের সংজ্ঞা লিখতে বলে মুখে মুখে নিজেই উত্তর বলে চললেন,— বয়ঃসন্ধির সদাচঞ্চল রোমাঞ্চ রঙিন মুহূর্তে সশরীরে সাক্ষাতের পূর্বে নায়ক নায়িকার হৃদয় বেলায় আকুল প্রেমের যে ঢেউ উত্তাল হয়ে ভেঙে পড়ে তাকে পূর্বরাগ বলে। সারা ক্লাস নিস্তব্ধ। স্যার গভীর প্রশান্তিতে স্মিত মুখে চোখ তুলে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,— কি বুঝলে তোমরা?প্রবল উৎসাহে উত্তর এল,— ফো-র-র-র-ঘোৎ ।অলীক স্যার বিস্মিত হয়ে শব্দগুচ্ছের রূপভান্ডার ছেড়ে তার উৎস সন্ধানে এদিকে ওদিকে বড় বড় চোখে চাইলেন আর বললেন,— কে উত্তর দিলি রে?— ঘো-র-র-র-ফোঁৎ।অল্প রূপ পাল্টে শব্দ ফেরত এল ক্লাসের একদম পিছনের সারি থেকে।লম্বা লম্বা পা ফেলে খুব দ্রুত অলীক স্যার ক্লাসের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়ালেন। জানালার পাশে শেষ বেঞ্চে মাথা রেখে মাঝ দুপুরের নরম রোদে গদানন তখন নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। মেঘের পাশে ভাসতে ভাসতে মাথায় দাঁড় কাকের ঠোক্কর খেয়ে গদানন ঘুম জড়ানো গলায় বলল,— ঠোকরাস না রে দাঁড়ু। মনে রাগ জমছে কিন্তু । এমন জবাবে অলীক স্যার প্রচন্ড রেগে গর্জন করে গদাননের মাথায় আরও একটা প্রকাণ্ড গাট্টা মারলেন,— পূর্বরাগ?— ওরে বাবা!গদাননের ঘুম ছুটল আর সে লাফিয়ে উঠল। তারপর চোখ খুলতেই দেখল, ভীষণ রাগি চোখে কটমট করে অলীক স্যার তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। উত্তেজিত অলীক স্যার চেঁচিয়ে উঠলেন,— ঘুমানো হচ্ছে হতচ্ছাড়া? আমি এত যত্ন করে পড়াচ্ছি আর তুই ঘুমাচ্ছিস? বল কি পড়াচ্ছিলাম?ঘুমন্ত গদানন জেগে ওঠে ঘাবড়ে গিয়ে বলল,— বাংলা, স্যার!স্যারের মেজাজ গেল তুমুল চটকে। দাঁত খিঁচিয়ে তিনি বললেন,— বাংলা ক্লাসে কি আমি উর্দু পড়াবো গাধা? বল হতভাগা, বাংলার কি পড়াচ্ছিলাম? এইটুকু সময়ের মধ্যেই গদাননের ঘুম পুরোপুরি ছুটেছে। শুধু গদানন কেন, এই ক্লাসের কেউ কখনো এত রাগতে দেখেনি অলীক স্যারকে। ফর্সা মানুষটার মুখটায় রাগের লাল আভা এসে হাজির হয়েছে ততক্ষণে। গদাননকে বাঁচাতে পাশে বসা গৌরাঙ্গ বিড়বিড়িয়ে বলল,— চন্ডীদাস। বৈষ্ণব পদাবলী।ক্লাসের স্বার্থপর নিস্তরঙ্গ বাতাস কিছু

পূর্বরাগ Read More »

ছাই

মৃত্যুর পরে নতুন জন্ম থাকে; ধর্ম বলেছে পরজন্মের কথা,ধর্ম না মেনে বিধর্মী লোকে হলে, সেখানেও কি মেলে পরজন্মের দেখা? তাই যদি হয় ধর্ম বা বিধর্মী, কোনোকিছুতেই আগ্রহ নেই মনে,একটা জন্ম এতেই আমি তো খুশি, দু চারটে কথা বলি যদি কেউ শোনে! প্রাসাদ গড়েছে অর্থ অথবা মোহে , আকাশ ছুঁয়েছে গর্বিত যার বোলে,পৃথিবীর পরে চরণ দাপিয়ে রেখে, সে কী সত্যিই ফিরবে ধরণী কোলে? পাথর ভেঙেছে, জন্ম নিয়েছে ধুলো ; বাতাস আগুন জলের ছোঁয়াতে এসে,সে পাথর কী ঘুমে ভেবেছিল তার মনে, বিলীন হবে সে এইভাবে ভেসে ভেসে? তোমার আমার বাঁচা শুধু একবারই; মরাটাও জেনো একবারই লেখা বাকি,তাহলে ওসব পরজন্মের ফুলো কথা, এইবেলা ছাড়ি, পথেতে দুটো পা রাখি। চলো হাঁটি ধরে হাতে দুই হাত রেখে, দুয়ে দুয়ে চার, চারে চারে হই ষোলো,যোগ আর গুণেতে সাজিয়ে মনের তরী, বিয়োগ ভাগের ঘাট ছেড়ে যাই চলো। সাফল্য পেলে গর্ব যেখানে মেশে, দুচোখে যতই বিজ্ঞ ভাবছো তাকে,এমন কিছু কী চিহ্ন রেখেছো পথে , যাতে অচেনা লোকটা তোমাকে টানবে বুকে? প্রশ্ন অনেক জমেছে মনের কোণে, অধিকাংশই বলবে জানি এ বোকা,ভোগ সুখ আর ফুর্তি ছেড়ে যে কেন, অসুখ বাঁধাবে, বেকার সঙ্গে থাকা! সূর্য কেবলই দিনের আকাশে ওঠে, চাঁদ তারা এরা রাত দিন জেগে থাকে,গর্বিত রবি কখনো জেনেছে সে কী, বৃথাই ফুরায় ওদেরকে ঢেকে ঢেকে? একটা জীবন, পরজন্মেতে ছাই, বুঝতে চাইলে এসো একদিন সাথে,অগাধ সময় আমার জীবনে আজ, এই হাত ধরে হাঁটি নিখোঁজের পথে। নদীর পাড়েতে বুড়ো বট তলে পোড়া, এক মুঠো ছাই, বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে,দেখো চেয়ে দূরে মাটির বুকেতে নেমে, হারিয়ে যাবে সে, আমাকে তোমাকে নিয়ে।

ছাই Read More »

বৃথা আশা

আমি হেরেছি অনেকবার,বিশ্বাস করো এই হাতখানা হাতেতে নিয়েছি যার,এই বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে, এই মন প্রাণ সবটুকু দিয়ে,অবহেলা ঘৃণা সবটুকু সয়ে, তারই হাতে সংহার!আমি হেরেছি সেই আবার। আমি সয়েছি অনেক দুখ,মানো কী না মানো তারই মাঝে আমি খুঁজেছি টুকরো সুখ,দুই চোখ হলে অশ্রুসজল, মন ঢেকে কথা হেসেছি অতল,ধরেও ধরিনি কী বা তার ছল, কত ব্যথা সয় এ বুক!আমি দুখেই মেনেছি সুখ। আমি ভুলেছি ফেরার পথ,সারথি বিহীন সপ্ত অশ্ব ভেঙেছে সাধের রথ,মহাবিশ্বের গোলকধাঁধায়, সূর্য চন্দ্র গ্রহ বা তারায়,ক্ষুদ্র জীবন কীভাবে হারায়, হেলায় হারে শপথ,আমি পাইনি ফেরার পথ। তবু স্বপ্ন আসে যে আজ,এই পোড়া মনে অজানা কারণে কেন জাগে রাঙা সাজ?রূপকথা যদি ফিরে আসে পাশে, ফিনিক্স আবার চোখ মেলে হাসে,বিস্তৃত ডানা ছড়ায় আকাশে, শেষবার পরে তাজ!তাই জেগে আছি আমি আজ!শুধু সেরে যেতে শেষ কাজ।

বৃথা আশা Read More »

জীবন্ত বিগ্রহ

তার চোখে আমি স্বপ্ন খুঁজেছি, চোখের পাতায় জল-দুই হাতে তাকে বুকেতে নিয়েছি, হারিয়ে শৈত্য ছল;ধুলো মাটি ছেড়ে এই হাত ধরে উঠতে দেখেছি রোজ,সবটুকু আশা, ব্যথা ও ভরসা, সেই রেখেছিল খোঁজ!ঝড় উঠেছিল, বর্ষার সাথে বিজলী এসেছে নেমে,তার দুটি পায় এ ছত্রছায় তবুও থাকেনি থেমে;দিন গিয়ে রাত এসেছে আবার, রাত শেষ হয়ে দিন,চরাচর মাঝে এ দুই জীবনে জমেছে অনেক ঋণ,তবু এ হিসাব এবং কিতাব, তুচ্ছ করেছে মন,আমি টানি রথ, বিগ্রহ সম , ভালোবাসা, ছোট বোন।

জীবন্ত বিগ্রহ Read More »

জানতে চেয়ে

প্রেমিক হতে মন পাগলামি চায়,নাকি পাগলেই প্রেম হয়ে যায় , চিন্তা করেছো আগে?জানতে চেয়েছো কি কখনো এ জীবনে কেনই বা প্রেম জাগে?সাগরের ঢেউ মনে নিতে চেয়ে,আর পাহাড়ের জলও ঐ বুকে নিয়ে, নদী কি বলেছে এসে?জেনেছো কি কিসে ভিজিছে চোখ, দুপাড়ের মাটি, প্রেম-শোক-ভালোবেসে?ঘন নীল পটে আল্পনা এঁকে,নাকি নীল বিষে ক্ষত ঢেকে রেখে , মেঘ কি বলেছে কথা?শুনেছো কি তুমি জলধারা হয়ে ঝরে, কেন সে ফুরায় একা?তুমি কি কখনো এসব ভেবেছো নিজে,মেলেনি যা কিছু হিসাব তোমার খুঁজে, রাখোনি হৃদয়ে স্মৃতি,আরেকটিবার খুলে দেখো সেই পাতা, প্রেম – নদী – মেঘ, আরও যা যা আছে চারপাশে, ইতিউতি।

জানতে চেয়ে Read More »

একদিন

একদিন নিভে যাবে দিনের আকাশ, একদিন থেমে যাবে নতুন সকাল,একদিন নেমে এসে রাতের আঁধারে, শিকড় বিছিয়ে নেবে অকাল পাতাল,একদিন চোখ মেলে নতুন কুঁড়ি, সূর্য পাবেনা বুঝে ঢেকে নেবে মুখ,একদিন পাতা ঝরা সব শেষ হবে, মহীরুহ জানবে না জীবনের সুখ,একদিন নীল বিষ রঙহীন হবে, অমৃত রঙহারা সাজ নেবে কালো,একদিন হিংসাও লাল ছাড়া হবে, প্রেমও হারাবে ঠিক সবুজের আলো,একদিন জানবো না হয়তো বা আমি,শিশির বা শিউলির ঝরবে কে শেষে,সেইদিন হয়তো বা অসীম কালোয়,হারিয়ে রইবো আমি তারি সাথে মিশে।

একদিন Read More »

বর্ষা ঝরা মনে

পথের বাঁকের ধারে , অচীনপুরের পরে , বিরাট দীঘির কাজল কালো জলে,আজকে সকাল বেলা,জ্যষ্টি ভাসায় ভেলা, বর্ষা এল অঝোর ডানা মেলে;পাড়ার যত ছেলে, সমস্ত কাজ ফেলে, দেখি হৈ হৈ করে ঝাঁপায় দীঘির কোলে,হারিয়ে যাওয়া গানে, আমার এ মন প্রাণে, কেন জলছবি এক আকুল ঢেউয়ে দোলে? শুকনো মাটির বুকে , বৃষ্টি আসে ঝেঁপে, যেন পিয়াস মেটায় প্রথম প্রেমে পিয়া,রুক্ষ মনের জমি , সিক্ত হল চুমি, এক মেঘ বালিকার সজল লাজুক হিয়া;শীতল বাতাস আসে , পুবের থেকে ভেসে, তাল সুপারি দুলছে শিখায় দিয়াযেমন কাঁপে সাঁঝে, আমার মনের মাঝে, কেন এলোমেলো সকল স্মৃতির খেয়া? জীবন পথের বাঁকে, দুঃখ সুখের শাখে, স্বপ্ন দেখার বিহঙ্গদের নীড়ে,উঁকি দিতেই দেখি, রয়েছে সব ঠিকই , দোয়াত কালি তেমনি আছে পড়ে;ছেলেবেলার খুশি, অনেক রাশি রাশি, কতো ছবি তুল্য সম হীরে,চোখের মণির পরে, আজ ঝাপসা হয়ে ঝরে, একলা আমি, গেছে বর্ষা ফিরে ফিরে। আজ ইচ্ছে মনের দ্বারে , ভিড়বো জীবন পাড়ে , বৃষ্টি ভেজা আমার অচীনপুরে।

বর্ষা ঝরা মনে Read More »

উত্তরণ

একটা মেয়ে ভাবছে বসে গালেতে হাত, হজমোলা –কেমিস্ট্রি বই লিখলো না তো এটার কোনো ফর্মুলা?ইতিহাসের পাতায় যেসব রাজারা আজ বছর ভর,দখল নিয়ে আটকে আছে, স্যার বলে না তাদের সর?কিম্বা ধরো ফিজিক্স মাঝে তিনটে মোটে লিভার কল,কেউ বলে না চার নম্বর কে বানাবি তোরাই বল?পৃথিবীটা হেলেই আছে ডিগ্রী সাড়ে ছেষট্টি,ভূগোল কেন এমনটা আর সিধে হলেই কি দোষটি?কে সি নাগের তেলের বাঁশে বাঁদর কেন উঠবে রোজ?ঐ বাঁশে তেল কতো লাগে কেউ রাখে কি অঙ্ক খোঁজ?বাংলা বইয়ে মধু কবির জটিল জটিল শব্দ আজ,কি প্রয়োজন? সুকুমার আর শক্তি দিয়েই মিটলে কাজ?ইংরেজিটা শেক্সপিয়ারের বড্ড কঠিন, সাহেব চাই?রাসকিন বন্ড দিব্যি আছেন, হাত বাড়ালেই তাঁকেই পাই।এসব নিয়েই ভাবতে ভাবতে আজকে হঠাৎ এই মেয়ে,খামের ভিতর রাখলো চিঠি লিখলো যেটা মন দিয়ে।কিন্তু এবার সমস্যাটা বেজায় কঠিন, কি মুশকিল,কোন ঠিকানায় চিঠি যাবে? প্রশ্নতে কে মারবে সিল?কার কাছেতে আছে খবর? কোথায় থাকে কোন সে জন?বদ্ধ কুঁয়োর গন্ডি ভেঙে হবে কি আর উত্তরণ?ইস্কুলটা যদি হতো খোলা আকাশ, সবুজ মাঠ,নতুন কোনো রবি ঠাকুর লিখতো আবার সহজ পাঠ!এসব ভেবেই এই মেয়ে কি আলোর খোঁজে বাঁধছে বুক?তাই যদি হয় স্বপ্ন দেখো আসবে সুদিন, প্রাণের সুখ।

উত্তরণ Read More »

হুইল চেয়ার

একটা চেয়ারে বসেছিলাম বেশ খানিকটা সময়। শুধুই অপেক্ষায়। সোজা শিরদাঁড়া, বসে বসে সেও বেঁকে হল সারা। বাতানুকুলীন ঘর, সে বাতাসে ছিল না গুমোট। অথবা কেউ বলেনি এসে ‘তু্ই এইবারে ওঠ’। বেশ কিছু জন, ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ এসেছিল হাতে নিয়ে, তাদের আপ্যায়ন আমি দিয়েছি ফিরিয়ে। বিক্ষিপ্ত আমার মন এবং মেজাজ, কি যে চায় কি না চায় বোঝা দায় আজ। মুহূর্তরাও যেন বিছিয়ে শিকড়, চূড়ান্ত স্থিতিশীল তারা, নেই নড়চড়। আমি নিজে জানি এ ক্ষণ ঠিকই ফুরাবে। আসবার কথা ছিল যার সেও এসে সামনে দাঁড়াবে। হয়তো বা হাসি মুখে বলবে সে,’চল, যাওয়া যাক।’ এও জানি মৃদু হেসে আমি পিছু নেব, যেন হইনি অবাক। শুধুই তো ছিলাম বসে খানিকটা সময়। লুকিয়ে ফেলবো ঠিকই এ অপেক্ষা যা জন্ম দিল – ক্ষোভ, বিরক্তি। কিন্তু ভয়? সে কিভাবে জন্মায়? ঠিক তখনি এদিকে, পাশ ফিরে চোখের কোণায় আমি দেখে ফেলি তাকে। অথর্ব নিশ্চুপ এক সাদা চুল বুড়ি, বোঝা দায় বয়সটা পেরিয়ে এল যোগ করে কতো গুলো কুড়ি। মাথা কাত, চোখ ঘোলা, একা একা হুইল চেয়ারে, ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে জীবনের ভাঙা তীরে। কে বা কারা যেন এসে তাকে রেখে গেছে চলে, ইচ্ছে বা অনিচ্ছে , কার বেশি কে বা জানে, বিস্মৃতি চোরা স্রোতে সব গেছে ভুলে। শুনলাম ভেসে আসা কথা দুই চার, আমারও আসার আগে বুড়ি এসে নিয়েছে নাকি এমনই অপেক্ষার অধিকার। হাতে পায়ে জোর ছিল বটে তবু শিরদাঁড়া নিজেই করেছি আমি বাঁকা। মনটাকে পাল্টালে হয়তো যেতাম চলে, অপেক্ষা ‘অহেতুক’ জেনেও আছি বৃথা একা। কিন্তু এখানে, সহসা বয়স বেড়ে দ্রুত, দেখি হু হু করে নিয়ে এল আমাকেও এ বুড়ির সমানে সমানে। সাদা মুখ, শূন্য চোখ, শুষ্ক ওষ্ঠ বেয়ে চুলের রেখাতে , হাহাকার ঝরে পড়ে যার সে নিজেই বোধশক্তি হারিয়েছে হয়তো আঘাতে আঘাতে। তবে আর কিবা সুখ, বিরক্তি, ক্ষোভ বা দুখ, মনে এল সব বাহুল্য, সবই অপচয়। শরীর খোলস ছেড়ে এ প্রাণের অবসরে এভাবেই তবে নেবে কি বিদায় ? যেই ভাবা অমনি আমার, নগন্য অপেক্ষার জন্য যত অভিযোগ, মনের গভীরে ছিল উড়ে গেল ফুৎকারে রইলো না কোনো অনুযোগ। তেমনি দাঁড়িয়ে আমি সেই স্থানে আর আমার সামনে থাকা হুইল চেয়ারে, চোখ কচলিয়ে দেখি বুড়ি নেই, আমার আকারটা শুধু কাত হয়ে আছে সেরকমই পড়ে।

হুইল চেয়ার Read More »

পাইনের শেষে

“পাইনের শেষে”যেখানে সীমানা থামে পাইনের সারি নামে, গায়ে গায়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে,যেখানে আমি ও তুমি, আমাদের স্মৃতিগুলো, আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে ভালোবেসে ফুল হয়ে বেঁচে ,যেখানে অনেক পাখি সারাদিন ডাকাডাকি, কত কাজ, কত কথা বলে,আর শুধু একবার এ জীবন দূরে ফেলে আমি তুমি সেখানেই চল যাই চলে। যেখানে আকাশ জাগে, যে আকাশে রঙ লাগে, যে রঙের উপমা না হয়,যেখানে আমরা একা, বাকি সব ধুলোমাখা, অতীতের যত কথা চুপচাপ সব মুছে যায়,যেখানে বৃষ্টি আসে, টুপ্ টুপ্ জল খসে, পৃথিবীর অনাদি আদিম এক রূপে,চল যাই দু’জনেতে, রামধনু স্বপ্নতে, পায়ে পায়ে হেঁটে ফিরি ফেলে আসা সুখে। কবেকার রূপকথা, খুশি হাসি আর ব্যথা, মনে যারা পাপড়ি ছড়ায়,কবেকার ভিজে চুল, জুঁই বেল চাঁপা ফুল, এলোমেলো ছবি হাতড়ায়,কবেকার পাইন আর কুয়াশার সে পাহাড়, একা আমাদের সাথী হতে,চিঠি পাঠালো ডাকে, আমাকে ও তোমাকে, হারিয়েছ তুমি চোরা স্রোতে?যেখানে সীমানা থামে পাইনের সারি নামে, একবার চল বসি হাত রেখে হাতে।

পাইনের শেষে Read More »

error: Content is protected !!
Scroll to Top