drsajalsur

দ্বিতীয় সুখ

এক একটা দিনে, সময় চলতো পথ আমার এ জীবনেতে ক্ষণ গুনে গুনে,কষ্টরা বুকে, কুরে কুরে খেয়ে যেত হৃদয়ের অলিন্দ নিলয় চিনে চিনে,চাপ ধরা শ্বাস, ভুলে যেত আসা যাওয়া গায়ে মেখে নোনা ধরা বাস,উঁইয়ের ঢিবির মতো ধীরে ধীরে ঝুরঝুরে হতো এই মনে থাকা সব আশ্বাস;মনে হতো আলো , যেটুকু সামনে এলো চোখে এসে পুরোপুরি নিভলেই ভালো,চোখের তারায়, যা কিছু জমেছে এসে সব যেন নিমেষেই হয় পুড়ে কালো;মরণের জ্বালা , কেন যে মানুষ হয়ে বেঁচে বয়ে এ জীবনে চলা-হোক সব শেষ, চিতা বা মাটির নীচে কী বা যায় আসে, বৃথা সব বলা,এ পৃথিবীর সাথে, ফুরিয়ে গিয়েছে দিন হাতে হাত পা ফেলার পথে,জানি না কী ভাবে , এভাবেও জীবনকে ভালোবেসে তারই পিছে বয়ে যেতে যেতে-নতুন এ বেলা, উপলব্ধির ডালি খুলে বসে আমি আজ সাজাই এ মালা;বুঝিনি আগে, কিছু প্রাণ কিছু মনে আমিও যে এঁকে গেছি আবেগের খেলা-সে হৃদয়রা ছুঁয়ে, পুড়ে যাওয়া পৃথিবীর রূপগুলো সবুজের রঙে যাবে ধুয়ে,আমার এ মনে, যাদের চোখের আলো অবশেষে ভালোবেসে নিয়েছি যে সয়ে,আজ তাদেরই তরে, অনন্ত বাঁচার ইচ্ছে কেন জানি ঝড় হয়ে আছড়িয়ে পড়ে,শিকড়ে শিকড়ে , সে চাওয়াই নিজেকে ছড়িয়ে দিয়ে মাটিকেই আঁকড়িয়ে ধরে।অশ্বথ ছায়া হয়ে থাকে , আমিও তেমনি হব এ আশাই অকাতরে জমা হয় বুকে,শুধু ভাবি রয়ে যাব হাজার বছর , আর ফল্গুর বুকে ঢেউ বান হয়ে ভেসে যাক পদ্মার সুখে।

দ্বিতীয় সুখ Read More »

রাখি

ছোট্ট সে এক শব্দ এসে,বসলো একা জানলা পাশে,এই শ্রাবণের শেষের পথের পূর্ণিমাতে-অনেক দিনের সুপ্ত আশা,মনের কোণের ভালোবাসা,আনলো সাথে বৃষ্টিধারায় সিক্ত হতে।হাতের পরে হাতটা এসে,বাঁধবে যে প্রাণ সুতোর রেশে,তার কী মাপার সত্যি কোনো একক থাকে –ছোট্ট সুতোয় ভরসা থাকুক,কী আসে লোক নাই বা দেখুক,ভাইয়ের হাতে বোনের রাখির মর্যাদাকে।সম্পদেরও সীমা আছে,তুচ্ছ সেসব মনের কাছে,অনুভূতির গন্ডি কী আর যায় রে মাপা-হোক না দুটো জীবন মিলে,গভীর কোনো ছন্দ এলে,রাখির দিনে এই শ্রাবণে সেই যে দেখা!

রাখি Read More »

অচেনা সুখ

কাল শেষ রাতে,মিশে ছিল যে আর্দ্রতা বাতাসের সাথে-হিমের পরশে এসে ঘন হয়ে নেমে এলো ঘাসের ডগায়,শিশির বিন্দু হয়ে,জানেনি কেউ কখনো কী বুকে নিয়ে-ক্ষণকাল চোখ মেলে নিঃশব্দে সে কেন যে পৃথিবীর হৃদয়ে হারায়?একথাই ভেবে হারা কুল,এতদিন ধরে কেউ ধরায়নি সে ঠিক নাকি ভুল-হিমের পরশে এসে পৃথিবীর বুকে মিশে গিয়েছিল যে জলের কণা,সেই ফিরে এসে,সাগরের বুক হয়ে শেষ রাতে বাতাসেই মেশে-শিশির বিন্দু হয়, জীবন চক্রাকারে, জানি আমি তুমি বুঝবে না।অচেনা সে দুখ,অশ্রুর রূপে একা সারারাত ঝরিয়ে যে সুখ-হৃদয়ের মাঝে যা সাগরের ঢেউ হয়, মুছে দিয়ে যায় বেদনা,দুই বাহুডোরে,রাত শেষে ভালোবেসে কতদিন পেয়েছি যে তারে,পাওনি তুমি তা নিজে, দেখনি কখনো খুঁজে, জীবনের এ সুখ-যন্ত্রণা।

অচেনা সুখ Read More »

আচারওয়ালা

ইস্কুলের গেটের কাছেছিল এক আচারওয়ালা, বেতের খাঁচা-কাঠের টুলে খাঁচা বসে,আচারওয়ালা বেচে আচার, সেটাই বাঁচা!টিফিনের ঘন্টা পড়ারআগের সব ক্লাস গুলোতেই তার কী মজা,গেটের কাছে কৃষ্ণচূড়া-তার নীচে আচারওয়ালার জীবন সোজা;এমনটাই ভাবতো সবাই,জটিল সব অঙ্ক ক্লাসে ডিগবাজি খায়,টুলের উপর বয়াম ভরাআচারের খাঁচা তখন মুচকি তাকায়;আমি রোজ ছুটির পরে,জোটানো পয়সা জুড়ে আচার কিনি,সে খাবার এমনি যে স্বাদ,চোখ বেঁধে দিলেও তারে জিভেই চিনি;শাল পাতা পাতিয়ে তাতে,আচারের বয়াম হতে চামচ কেটে,আচারওয়ালা বেচতো আচার,টক ঝাল মিষ্টি বাহার, স্কুলের গেটে;‘কাকু দাও একটু আরও,চামচটা ঝাঁকিয়ে ধরো শালপাতাতে’এমনই কথার তোড়ে,অনুরোধ দাবি জোড়ে গেটের পথে;এরও পরে স্কুলের ছুটি,পকেটে থাকতো যদি দু চার আনা,সেদিনের রাজা আমি,সুখ সব জিভেই টানি নেই যে মানা;একবার ছুটির পরে,গোটা মাস সবাই ঘরে, শীতের ছুটি,এ কদিন আচারওয়ালাররাখেনি খোঁজ কোনো আর বয়ামকটি,এমনই ভেবে নিয়ে,এক ক্লাস এগিয়ে গিয়ে প্রথম দিনে,টিফিনের ছুটির আগেইতাকিয়ে দেখি গেটে আকুল মনে,কৃষ্ণচূড়ার তলেযেখানে তার রাজ্যখুলে থাকার কথা,বসতো সে রোজই এসেচাইতো মুচকি হেসে, শূন্য সেথা!এরপর প্রতিটি দিনআশা হয় ক্ষীণ আরও ক্ষীণ স্কুলের গেটে,সে কাকু আর আসেনাতার কথা কেউ বলেনা খাতা স্লেটে;এভাবেই দিন চলে যায়,আমি বড় গোঁফের রেখায় হতেই থাকি,আচারের বেতের খাঁচা,শালপাতা চেটেই বাঁচা, সবই ফাঁকি;সেদিনের বিকেল বেলা,সাঙ্গ পড়ার খেলা স্কুল বাড়িতে,খবরটা পেলাম কানেমন ধরে হ্যাঁচকা টানে মৃত্যুগীতে;আমার ঐ আচারওয়ালাযে নাকি তুলতো আচার শালপাতাতে,একমাস ছুটির ঘোরেবেচা কেনা বন্ধ করে ছাড়লো জীবন ধারদেনাতে ;বয়স তো আমার শুধুইএক দশ যোগ দুই দুই কীই বা জানি,জীবনের হিসেব নিকেশঘর আর মাঠেই তো শেষ, সেটাই মানি ;এরপরে দিন কেটে যায়আচারের বয়াম হারায় আমার চোখে,‘পায়েতে দাঁড়াও যদিতাহলেই জীবন নদী’ সবাই বলে বইবে সুখে ;পৃথিবীর ঘোরার তালে,ইস্কুল কোথায় ফেলে আমি এখন,সুট বুট টাই পরে নিইবড় বড় বক্তৃতা দিই যখন তখন;সবাই আমায় জ্ঞানী মানে,জগতের খবর জানে আমার কাছে,আমি তবু রাতের বেলা,খুঁজি নিয়ে চক্ষু খোলা , কোথায় গেছেআমার ঐ আচারওয়ালা?খাঁচা বয়াম সব জটলা পাকিয়ে বুকে,আমি আজ বড় হয়েও,ধার করে হৃদয় রাঙাই ভিজে চোখে।

আচারওয়ালা Read More »

আগুন পাখি

আগুন পাখির নাম শুনেছি মুখেতে তার অগ্নি জ্বলে,সূর্য নিজেও নিজের বুকে শুনেছি রোজ আগুন ঢালে;আগুন নাকি হৃদয় মাঝে ভালোবাসার শিকড় বাড়ায়,সেই আগুনের উত্তাপে রোজ মানুষ সুখের ফসল কুড়ায়;অনেক আগে পাথর যুগে আমরা যখন অগ্নি হারা,প্রতিকূল এই ধরিত্রীতে মানুষ ছিল ছন্নছাড়া,আগুন হাতের মুঠোয় পেয়ে দাবিয়ে নিলো এই পৃথিবী,তখন থেকেই সেই তো রাজা বাকিরা সব প্রজার ছবি!জ্বলবে আগুন নিভবে আগুন তোমার আমার ইচ্ছে মতো,এই ভয়েই কী থাকলো দূরে সূর্য নিয়ে আগুন যত?অহংকারের আগুন মনে এমনি করেই মেলছে ডানা?মানুষ নিজেই আত্মহারা তুচ্ছ করে জগৎখানা?সবই হল আগুন নিয়ে বুঝতে নারি সহজ কথা,আগুন যদি পোড়ায় জমিন পাখির কেন ডানায় ব্যথা?ফসল যদি জ্বলতে থাকে আগুন মানুষ জ্বালায় বনে,এতো বড় আকাশ পেয়েও জ্বালা কেন পাখির মনে?আবার ধরো শিখা ছাড়াই আগুন জ্বলে আমার বুকে,আগুন নেভার পরেও সেথায় আগুন কেন জ্বলেই থাকে?প্রশ্ন শুধুই অবিরত আমার মনে আসছে ভেসে,জ্বলছে আগুন আমার ডানায় দেখেও তুমি রইলে বসে?

আগুন পাখি Read More »

অসমাপ্ত

বিশ্বরূপের বাড়ি ছিলো বিশ্ববিণার পাশে,হাঁটতে শেখার বয়স থেকেই এ ওর বাড়ি আসে।বিশ্বরূপের বাবার ছিলো মস্ত জমিদারী,ঝরখা খুলে চাইলে শুধুই কাড়তো নজর গাড়ি।শান বাঁধানো উঠোন জুড়ে নতুন গাড়ির মেলা,আজকে এটা কিনলে ওটা কাল বেচাটাই খেলা।বিরাট বাড়ির অলিন্দতে টাকার ছিলো ঢেউ,চাকর বাকর আরাম অঢেল , মন খোঁজেনি কেউ। বিশ্ববিণার ছোট্ট বাড়ি গল্পে যেমন হয়,তার বাবাও তো মস্ত বড় সেটাই ছিল ভয়!অর্থ ঝুলি রইলো খালি সেসব কী শেষ কথা,মানুষ হবার পথটা মনে শিক্ষা শেখায় যেথা।প্রশ্ন অগাধ আলোর রূপে মোছে মনের কালি,বিশ্বজগৎ সেথায় চোখে বোলায় জ্ঞানের তুলি।ওদিকে সেই সাদা কালোর বোড়ের চালের দাবা,শুধু জমিদারীর হিসেব বোঝেন বিশ্বরূপের বাবা। এর পরেও তো গল্প থাকে জানতে কী আর মানা,সেদিন আকাশ ভীষণ নীলে যখন ভেজায় ডানা;নরম শিশির গোলাপ ফুলের পাপড়ি থাকে ছুঁয়ে,সবাই তখন সে ফুল হাতেই বিদ্যাদেবীর পায়ে;অঞ্জলি দেয় দুহাত জুড়ে আরাধনার তরে,সদ্য যুবক একটি হৃদয় হাত রাখে হাত পরে;কিশোরী এক সেদিনটাতেই মনের বেড়ি খুলে,ভালোবাসার তরী ভাসায় প্রেমসাগরের জলে। বিশ্বরূপের বাবা হলেন রাগেতে চণ্ডাল,জমিদারের ছেলের কেন এমনতর হাল?রাজার সাথে রাজার হবে আত্মীয়তার যোগ,অর্থহীনের স্বভাব খারাপ অর্থ চোষাই রোগ।দিনের আলোয় আঁধার ঢাকে বিশ্ববিণার বাড়ি,বাবা ছুটি নিলেন আগেই তাদের সাথে আড়ি;একলা মায়ের মাথার পাশে একলা মেয়ে রয়,জীবন তরী ঘূর্ণি টানে ডুবছে, জেনে ভয়! এখান থেকেই আমি না হয় গল্প বলি মিছে,স্বপ্ন দেখুক নতুন জীবন দুঃখ থাকুক পিছে।ফালি চাঁদের শেষ আলো যেই ডুবলো আকাশ পরে,নিকষ কালো অন্ধকারে ছোট্ট বাড়ি ভরে;সেই সময়েই হাতে নিয়ে একটু খানি আলো,বিশ্ববিণার ভালোবাসা তার কাছেতেই এলো।শিকল ছিঁড়ে হবু রাজা নতুন শিকড় পেতে,না হয় জীবন নতুন আঁকুক, থাকুক দুজন সাথে। আমি এবার আসি, এখন গল্প তোমার হাতে।তোমরা জোড়ো দু চার কলি, নতুন হৃদয়েতে।

অসমাপ্ত Read More »

ভাঁটফুলের দেশে

রাতের আঁধারে একা দেখেছো কী তুমি-কোটি কোটি তারা জেগে রয়, খোলা আকাশের বুক চুমি, ছায়াপথ জুড়ে,মুঠো মুঠো ভাঁটফুল ফুটে আছে বুঝি-যে পথে যাইনি আমি, যে পথের বুকে তবু খুঁজি, সুখ আছে ভাবি থরে থরে;কাছের মানুষ যারা সময়ের কোলে -;আমাকে একলা ফেলে, একদিন জানিনা কীসের তরে গিয়েছিল চলে, না ফেরার দেশে,সেখানে রয়েছে তারা, সেই ছায়াপথে-আমি জেগে রই একা, বুক ভরা আঁধারের সাথে, চেয়ে দেখি তাদেরকে ভাঁটফুল বেশে;রাত আসে রাত যায়, জানি একা একা-চোখ চেয়ে একলা সে দেখা, সেও বুঝি একদিন মেলে দেবে পাখা, ঠাঁই পাব ঐ ভাঁটফুলে,খসে পড়া তারা ফিরে যাবে মহাকাশে-একদিন, তুমি জানো, রয়ে গেছি পৃথিবীর বুকে আমি সব শেষে, শুধু ভালোবেসে;আমাকেও খুঁজো চেয়ে ছায়াপথে, তারাদের কোলে।

ভাঁটফুলের দেশে Read More »

হারানো চর

একটা নদীর চর জেগেছে, নদীর মনে স্বপ্ন ভরা,জলের উপর ভাটার সময় ঐ দেখা যায় নদীর চরা!জোয়ার যখন উজান গাঙে ডুবিয়ে রাখে মনের আশা,নদীর চরে তখন জল পাখির চলে ভালোবাসা।এমনি করেই কালের স্রোতে ভাটির টানে পলির দেশে,জোয়ার এলেও সে চর জাগে, কীসের জন্য অবশেষে?বাতাস সেথায় জলের সাথেই আনলো সবুজ বীজের রাশি,চরার মাটি স্বপ্ন দেখে অনেক প্রাণের অনেক হাসি;কাশের ঢেউয়ে শরৎ এল, হেমন্ত আর শীতে পাখি,চরার মাটি উচ্ছলতায় ভেবেই সারা হচ্ছে দেখি।দিব্যি ছিল জীবনগুলো, চরার যদি জীবন থাকে,বলছিলাম যে স্বপ্ন কথা, ভেবেই মরে, কোথায় রাখে?এক যে আছে বাঁশিওয়ালা বাঁশের বনে বাঁশি নিয়ে,অদৃষ্ট শুনেছি নাম, পোড়ায় কপাল নজর দিয়ে।বর্ষা পরে তার হাত ধরে আসলো এমন জলের বোঝা,স্বপ্ন মাখা নদীর মাঝে চরের বুকে বিঁধলো সোজা!ঘোলা জলের হড়কা স্রোতে শিকড় হারা সে চর খানি,পাখপাখালি, কাশ আর গাছের বাস্তুহারা এই কাহিনী।এখন সেথায় জলের কোলে উজান কিম্বা ভাটির পরে,সে চর শুধুই স্মৃতির পাতায় , পুরনো বই-খাতার ঘরে।গল্প আমার অনেক হল, এবার তবে টানছি দাঁড়ি,নতুন চরের গল্প পেলে বোলো আমায়, তাড়াতাড়ি।

হারানো চর Read More »

বিনসা

বিনসা রোজ বেরোয় বেশ ভোরে। ঋষপের মোনাস্ট্রির ঠিক উল্টো দিকে , পিচ্ ঢালা রাস্তার পাশে যেখানে বাঁশ আর কাঠের দেওয়াল মিলেমিশে আজও থুকপার দোকানটার আব্রু বাঁচিয়ে রেখে চলেছে, যে দোকানে সূর্য ডোবার আগেই একবার চাইলেই রকসি বা টংবা নেপালি মদ হাসি মুখে হাজির হয়, তার ঠিক পিছনের ছোট্ট ঘরটাতে বিনসা আছে জন্মের পর থেকেই। চিরতরে হারিয়ে যাবার আগে একদিন এ ঘরে বিনসার মা বাবাও ছিল। তারপরে একা বিনসা। বিয়ের পিঁড়িতে বসা আর হয়নি ওর। ওসবের অনেক আগেই শিয়ালের দাঁত কামড় বসিয়ে গিয়েছে অপরিপক্ক মনের গভীরে। বিনসা আর বিয়ে করেনি ঘেন্নায় । নেপালি ভাষায় বিনসা মানে ‘ভয়হীন নারী’। যে নারীর মনে সাহসের আগুন জ্বলে আছে সেই ‘বিনসা’। জীবনযুদ্ধে টিঁকে থাকার তাগিদে, কাজের খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে বিনসার কাঠ কুড়ানোর শুরু ‘কিশোরীর ঘুঙুর’ পায়ে পরার আগে থেকে। দেখতে দেখতে অনেকগুলো বছর পেরিয়ে এসেছে এলোমেলো সময়। শেষমেষ ঋষপের আকাশ ছোঁয়া গাছেদের তলায় তলায় ঘুরে কাঠ জোগাড়ের কাজ আর ছাড়েনি বিনসা। দিনের প্রথম সময়টা পাইনের তলায় দিব্যি কেটে যায়। এতে রোজগার হয়তো খুব বেশি হয় না, কিন্তু এর বেশি তার আর প্রয়োজনই বা কি? যদিও বুনো শিয়ালের দেখা পাহাড়ের বনেও মেলে কখনো কখনো, কিন্তু বিনসার কোমরে গোঁজা ছুরিকে সব শিয়ালরাই ভয় পায়। নেপালি ভাষায় বিনসা মানে ‘ভয়হীন নারী’ এই শেষ বছর সাতেক বেশ নিশ্চিন্ত আছে বিনসা। কাঞ্চা বড় হয়েছে তার কোলের গরমেই। সে গরমে এতটাই ভালোবাসা লেগেছিল যে কাঞ্চা একটু বড় হতেই একাকী শীতের রাতেও পোষ্যই বিনসার মনে সাহসের উত্তাপ জুগিয়ে গেছে ক্রমাগত। কিছু জানোয়ার গরমের লোভে ভরা কোল খালি করে নিয়ে যায় বলে কাগজের পাতায় খবর হয় বটে কিন্তু সে সব শোনা ঘটনা আজ আর বিনসাকে বিচলিত করে না। কাঞ্চা পাহারায় থাকে পুরোটা সময়। ছায়ার মতো। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলে বিনসা বাড়ি ফেরে। টুকরো কাঠের বোঝা বিকেলে ওজনদরে বিক্রি হয়ে যায় মহাজনের আড়তে। সামান্য টাকা কিন্তু তাতেই দিব্যি চলে যায় বিনসা ও কাঞ্চার। নিজের ভালো মন্দের কৈফিয়ত বিনসা আজও কারোর কাছেই দিতে বাধ্য নয়। ঈশ্বরের, কাছেও না। কারণ একটাই। জীবনযুদ্ধের লড়াইতে বিনসা জেনেছে ঈশ্বর প্রয়োজনে স্বার্থপর হতে পারে কিন্তু কাঞ্চার ছায়ারাও কখনো অকৃতজ্ঞ হয় না। পিচ্ ঢালা ঋষপের পথে ভর দুপুরেই হঠাৎ হঠাৎ মেঘ নেমে আসে। তবুও সে মেঘের মাঝেই টুকরো রোদের মতো পথ হাঁটে কোনো কোনো নারী । এ পৃথিবীর এদিকে সেদিকে, লুকোনো কোণায় কোণায় এমনই হাজারো বিনসার গল্প সবার অলক্ষে নিজের সাহসে ফুল হয়ে ফুটে থাকে। ফুল তো ফুলই। সব ফুলের গোলাপ হবার কি সত্যিই প্রয়োজন? আমরা কেউ কেউ বরং কাঞ্চা হবারই না হয় স্বপ্ন দেখি। সেটাই বা কম কি?

বিনসা Read More »

error: Content is protected !!
Scroll to Top