প্রশ্ন : নাক থেকে রক্ত পড়ার সমস্যা কেন বেশি?
উত্তর : নাকের গঠন ও শারীরবৃত্তীয় কারণে রক্ত চলাচলের শিরা, উপশিরা বা ক্যাপিলারি সংখ্যায় অনেক বেশি। দেহের স্বাভাবিক ত্বক বা চামড়ার আবরণের সুরক্ষা নাকের ভিতরে থাকে না অথচ বাইরের হাওয়া, উত্তাপ, দূষণ বা আঘাত সহজেই নাকের উপরে সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাছাড়া নাকের হাড়ের উপরে যে আবরণ তাতে পেশী না থাকার কারণে সূক্ষ্ম উপশিরা বা ক্যাপিলারি ছিঁড়লে পেশী তন্তুর স্বাভাবিক সংকোচনে রক্ত তাড়াতাড়ি বন্ধ হবার উপায়ও থাকে না। এসবের জন্যই নাক থেকে রক্তপাতের সমস্যা বেশি হয়।
প্রশ্ন : রক্তপাতের কারণ কি?
উত্তর : এক এক বয়সে এক এক রকম কারণের প্রবণতা বেশি থাকে।
১) ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নাক খোঁটা, ক্রমাগত নাকের সর্দি বা কোনো কিছু নাকের মধ্যে ঢুকে ‘ফরেন বডি’ হয়ে ইনফেকশন বা প্রদাহ (inflammation) করা ।
২) যৌবন বা তৎপরবর্তী সময়ে নাকের হাড় বেঁকে যাওয়া বা সাইনাস বা পলিপ বা ফাংগাস জনিত সমস্যা।
৩) বেশি বয়সের বেলায় বেড়ে যাওয়া রক্তচাপ ( high blood pressure) বা রক্ত তরল রাখার ওষুধ খাওয়া ( যেখানে অতিরিক্ত তরল হবার জন্য রক্ত জমতে সময় নেয় )।
৪) জিনগত কারণ বা লিভারের সমস্যা বা অন্য কিছু অসুখে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে যাওয়া।
৫) বয়সন্ধিতে ছেলেদের নাকের ধমনীর টিউমার অথবা বেশি বয়সে নাকের ভিতরে হওয়া কর্কট রোগ।
৬) এছাড়াও শীতকাল বা প্রবল গরমে নাকের ভিতরের আবরণ ফেটে বা যেকোনো বয়সে চোট আঘাত জনিত সমস্যা বা অন্যান্য কারণেও নাক থেকে রক্ত আসতে পারে।
প্রশ্ন : নাক থেকে রক্ত আসলে কি করবেন না?
উত্তর : ১) অযথা টেনশন করবেন না। শরীর কাটলে যদি রক্ত বেরোতে পারে তবে নাক থেকেও একই সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। নাক থেকে রক্তপাত থামতে সময় নেয় এটা অবশ্যই সমস্যা কিন্তু যত উত্তেজিত হয়ে পড়বেন, হার্টের গতি এবং রক্তচাপ তত বেড়ে গিয়ে আরও বেশি রক্ত ঝরাবে।
২) মাথার রক্ত নাক দিয়ে বেরোয় না। এর জন্য যে আঘাত প্রয়োজন তাতে অনেক আগেই মস্তিস্ক চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হবার কথা। তাই এ চিন্তা মাথায় আনার প্রয়োজন নেই। মস্তিষ্কের চারপাশে রক্ত থাকে না, জলের মতো স্বচ্ছ তরল থাকে। মস্তিস্ক ফুঁটো হয়ে নাকে কিছু যদি আসে তবে তা স্বচ্ছ জল, ‘লাল’ রক্ত নয়।
৩) নাকে জল টেনে বা নাক ঝেড়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা বিন্দুমাত্র করবেন না। এতে জমাট বাঁধা রক্ত (clot) নিজের নির্দিষ্ট জায়গায় জমে আরও রক্তক্ষরণ প্রতিরোধের যে স্বাভাবিক কাজ করছে সেটাকেই নষ্ট করে দেওয়া হবে। থেমে যাওয়া রক্তক্ষরণ নতুন করে আবার শুরু হবে।
৪) সামনে ঝুঁকবেন না। ভারি জিনিস তুলবেন না। কোষ্ঠ কাঠিন্য হতে দেবেন না। এসবে রক্তচাপ বেড়ে যায় ও পুনরায় রক্ত বেরোতে পারে।
৫) গরম বাষ্প নাকে টানবেন না।
প্রশ্ন : তাহলে কি করণীয়?
উত্তর :
১) যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।
২) বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনী দিয়ে নাকের সামনের অংশ দুপাশ থেকে এমন ভাবে জোরসে চিপে ১০ মিনিট ধরুন যাতে ঐ চাপেই রক্ত বন্ধ হয় ( সব্জি কাটতে গিয়ে বঁটি বা ছুরিতে হাত কাটলে আপনি ঠিক যেমন চাপ দিয়ে রক্ত বন্ধ করেন)।
৩) বরফ নিয়ে নাকের উপরে ও চারপাশে লাগান যাতে ঠান্ডা পেয়ে রক্ত চলাচলের পথ সংকোচন হয়।
৪) চিৎ হয়ে শুয়ে থাকুন। নাকের ভিতরের রক্ত গলায় এসে পড়লে গিলে ফেলুন অথবা মুখ থেকে বের করে দিন।
৫) রক্তচাপ মাপুন। বেশি থাকলে এবং আপনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী হলে আপনার ঐ সংক্রান্ত প্রেসক্রিপশনের ওষুধ একটা অতিরিক্ত নিতে পারেন যদি চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা না যায়।
৬) হার্টের অসুখে রক্ত তরল রাখার ওষুধ খাবার জন্য থাকলে আপাতত তা বন্ধ রাখুন এবং আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
৭) রক্তপাত বন্ধ করার কিছু ওষুধ ট্যাবলেট বা ইনজেকশন হিসাবে বাজারে পাওয়া যায় কিন্তু তা আদেও কাজ করবে কিনা অথবা খাওয়া যাবে কিনা সেটা আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করবেন।
৮) এভাবে রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে নাক কান গলার চিকিৎসককে রক্ত বেরোনোর আসল কারণ খোঁজার ও তা নিরাময়ের জন্য সুযোগ দিন। রক্তপাত বন্ধ না হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিকটবর্তী হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে নাকের ভিতরে ‘প্যাক’ করে অথবা ক্ষেত্র বিশেষে রক্ত বেরোনোর স্থান ‘ক্লিপ’ করে বা ‘পুড়িয়ে’ দিয়ে ( cauterization) রক্ত বেরোনো থামাতে হতে পারে।
(মতামত ব্যক্তিগত। সাধারণ মানুষের সচেতনতার উদ্দেশ্যে যথা সম্ভব ‘চিকিৎসা পরিভাষা’ বর্জন করে এই লেখা। সমস্যা হলে আপনার কাছের নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।)